মনোহরদীতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে যুবকের মৃত্যু
নরসিংদীর মনোহরদীতে চোর সন্দেহে এলাকাবাসীর পিটুনিতে কামাল মিয়া (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পিটুনির পর প্রায় ১২ ঘণ্টা তিনি বেঁচে ছিলেন। আজ রোববার দুপুরে তাঁর মৃত্যুর পর বিকেল পাঁচটার দিকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের মাইশাকান্দি গ্রামে চোর সন্দেহে ওই যুবককে পিটুনি দেন এলাকাবাসী। নিহত কামাল মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। তিনি মনোহরদীর মাইশাকান্দি গ্রামে কেন গিয়েছিলেন, তা এখনো জানা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাইশাকান্দি গ্রামের একটি বাড়িতে রাত তিনটার দিকে দুজন যুবক সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন। একজন তাঁদের দেখে ফেলেন এবং চিৎকার শুরু করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে কামাল মিয়াকে আটক করলেও সঙ্গে থাকা আরেক যুবক পুকুরে লাফিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা কামালকে উপর্যুপরি পিটুনি দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি পড়ে থাকেন।
এলাকাবাসী জানান, সকাল ছয়টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. দুলাল মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রউফকে বিষয়টি জানান। তাঁরা দুজন আহত কামালকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে নিয়ে রওনা হলেও ঢাকা বা নরসিংদীতে না নিয়ে মাঝপথ থেকে আবার ফিরে আসেন। চিকিৎসা না পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে কামাল মিয়া মারা যায়। খবর পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে মনোহরদী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। লাশ থানায় আনার পর তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাতেই তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চন্দনবাড়ি ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. দুলাল মিয়া বলেন, সম্প্রতি ওই বাড়ি থেকে গাড়ির মোটর ও যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। গতকাল গভীর রাতে দুজনকে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করতে দেখে এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, তাঁরা আবার চুরি করতে এসেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আটক কামাল মিয়াকে পিটুনি দেন তাঁরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কামাল মিয়ার শরীরে পিটুনির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এসে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।