ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকসহ ২৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
চাঁদাবাজি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নির্যাতনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুপুরে কলেজের সভাকক্ষে অধ্যক্ষ নাজমুল আলম খানের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এতে ২৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি অপরাধের মাত্রা কম হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মুচলেকা নেওয়া সাপেক্ষে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে অবস্থান এবং ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অনুপম সাহা, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হাসানসহ মোট ২৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত ৫ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপাধ্যক্ষ জিম্মা হোসেনকে সভাপতি ও মো. বদরউদ্দীনকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
৫ নভেম্বর প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। অভিযোগকারী, অভিযুক্ত, শিক্ষার্থীদের সাক্ষ্য, সরবরাহ করা নথি ও সরেজমিন পরিদর্শনের পর তদন্ত কমিটি বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সুপারিশ করে একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠায়। আজ কাউন্সিলের সভা শেষে অধ্যক্ষ মো. নাজমুল আলম খান স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে আটজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে (বর্তমানে চিকিৎসক) ৫ অক্টোবর থেকে আজীবন কলেজের ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে প্রবেশ, অবস্থান ও যেকোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ম-৫২ ব্যাচের অনুপম সাহা ও মুশফিক আনোয়ার; ম-৫৩ ব্যাচের আবদুল্লাহ আল হাসান ও অনুপম দত্ত; বিডিএস-৫ ব্যাচের সঞ্জীব সরকার ও সাইফুল ইসলাম; ম-৫৪ ব্যাচের মাহিদুল হক এবং ম-৫৫ ব্যাচের ডা. জাহিদুল ইসলাম তুষার। অনুপম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আবদুল্লাহ সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
১১ শিক্ষার্থীকে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ম-৫৭ ব্যাচের রকিবুল হাসান ও আলমগীর হোসেন; ম-৫৩ ব্যাচের মেহেদী হাসান; বিডিএস-১০ ব্যাচের মেরাজ হোসেন; বিডিএস-৭ ব্যাচের সানজিদ আহমেদ ও মুনতাসির রাতুল; বিডিএস-৮ ব্যাচের শাহরিয়ার ইফতেখার; ম-৫৮ ব্যাচের রাইয়ান হাবিব, অর্ণব সাহা ও শামস আরেফিন এবং বিডিএস-১০ ব্যাচের আসিফ ইকবাল। এর মধ্যে প্রথম নয়জনকে হোস্টেলে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চারজনকে হোস্টেলে প্রবেশ আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বিডিএস-৮ ব্যাচের আশিক মাহমুদ, ম-৫৬ ব্যাচের মঞ্জুরুল হক, ম-৫৭ ব্যাচের আশিক উদ্দিন ও ম-৫৯ ব্যাচের কুবের চক্রবর্তী। এ ছাড়া অপরাধের মাত্রা কম হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মুচলেকা নেওয়া সাপেক্ষে পাঁচ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে অবস্থান এবং ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ওই পাঁচজন হলেন ম-৫৭ ব্যাচের শিপন হাসান ও সৈয়দ রায়হান আল আশরাফ; ম-৫৮ ব্যাচের আসিফ রায়হান; ম-৫৯ ব্যাচের দিগন্ত সরকার ও সিয়াম জাওয়াদ। এসব সিদ্ধান্ত অমান্যকারী ছাত্রকে ভবিষ্যতে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে শাস্তি বাড়ানো হতে পারে বলে অধ্যক্ষের চিঠিতে জানানো হয়েছে।