চট্টগ্রামে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি
চট্টগ্রাম জেলায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। জেলায় প্রতি ১০০ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা এখন ৯৯ জন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর জেলা প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে দেখা যায়, পুরুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৩ এবং নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৬ জন। নারী ২৮ হাজার ৮১৩ জন বেশি। অনুষ্ঠানে তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান। তিনি জানান, ১০ বছরে চট্টগ্রাম জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার জন। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে নারীর সংখ্যা ২১ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৭ জন। পুরুষের সংখ্যা এর চেয়ে ১ লাখ ৮ হাজার ১৪১ জন কম। গ্রামাঞ্চলে পুরুষের সংখ্যা ২০ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯৬ জন। তবে নগরের নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। নগর এলাকায় পুরুষের সংখ্যা ২৪ লাখ ৮২ হাজার ১১৭ জন। নারীর সংখ্যার ২৪ লাখ ২ হাজার ৭৮৯ জন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দেব দুলাল ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি চন্দন কুমার পোদ্দার।
জেলা প্রশাসক বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেছে, তা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উন্নয়নে কাজে লাগবে। বিশেষ করে স্যানিটেশন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে এখনো ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ মানুষ খোলা টয়লেট ব্যবহার করে। এটিকে শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতি বর্গকিলোমিটারে বেড়েছে ২৯৪ জন
জেলা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে চট্টগ্রামে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করতেন ১ হাজার ৪৪২ জন। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৭৩৬ জন বসবাস করেন। অর্থাৎ ১০ বছরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা বেড়েছে ২৯৪ জন। জেলায় জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৬৫। ২০১১ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৪০।
এর মধ্যে শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ১০ বছরে চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ১১৩ জন। ২০১১ সালে নগরের জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫২ জন। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। তবে ১০ বছরে গ্রামের জনসংখ্যা কমেছে। বর্তমানে গ্রামের বসবাসকারীর সংখ্যা ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন। ১০ বছর আগে গ্রামের জনসংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৪ জন বেশি ছিল।
উপজেলাগুলোর মধ্যে ফটিকছড়ির জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলার জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪২ হাজার ৮৯ জন। এ উপজেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬ জন। সবচেয়ে কম কর্ণফুলী উপজেলায়। কর্ণফুলী উপজেলায় জনসংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৭ জন। ২০১১ সালে এটি উপজেলা ছিল না।
চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। হিন্দু জনসংখ্যা ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। বৌদ্ধ জনসংখ্যা ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। খ্রিষ্টান জনসংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বেশি
জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা নারীদের তুলনায় বেশি। দেশে বর্তমানে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে অবিবাহিত নারী ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। বিবাহিত নারী ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও বিবাহিত পুরুষ ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
জেলায় ১০ বছরের সাক্ষরতার হার বেড়েছে ২২ দশমিক ১৫। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সাক্ষরতার হার ৮১ দশমিক শূন্য ৬। এর মধ্যে নারী ৭৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পুরুষ ৮২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
জেলায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী পড়ালেখা, কাজ বা কোনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত নেই। কৃষিক্ষেত্রে কাজ করেন ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে সেবা খাতে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও শিল্প খাতে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ জড়িত। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষ।
চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেলা পর্যায়ে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণার কাজে সহায়তা করবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন খাতে নতুন প্রকল্প ও উদ্যোগ নিতেও সহায়তা করবে বলে আশা করেন তিনি।