শরতের ঝলমলে সকালে শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ মিলনায়তনের চত্বর। প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছে তারা। কেউ এসেছে মা-বাবার হাত ধরে, কেউ এসেছে ভাই–বোনকে নিয়ে এসেছে। একে অপরকে কাছে পেয়ে সহপাঠী-বন্ধুদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসব পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলার ১ হাজার ১০০ কৃতী শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিবন্ধন করেছে।
উৎসবে কথা হয় বেশ কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। জেমিসা আলম, তাম্মী শাহরিয়ার ওরফে দিশা, আফরোজ ফারজানা ওরফে মুসকান ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। তারা বলে, স্কুলের বন্ধুরা সবাই একেক জায়গায় ভর্তি হয়েছে। সবাই ছড়িয়ে গেছে। আবার কবে মিলিত হবে, তার ঠিক নেই। এ উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। এ অনুভূতি বোঝানো যাবে না।
অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে ক্রেস্ট গ্রহণ করে। সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অনলাইনে সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস।
শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিতে উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুরের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, ইকো পাঠশালা অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল জলিল ও ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলামসহ আরও অনেক গুণীজন। শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৌমিক রায়। আর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলবে বন্ধুসভার সদস্য ও কৃতী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
জেলা শহর থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সেই উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের জাবরহাটে বসবাস শিক্ষার্থী জুঁই আক্তারের। এবার জারবহাট হেমচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে জুঁই। উৎসবে অংশ নিতে এসে সে বলে, অনুষ্ঠানটি অন্য অনুষ্ঠানের থেকে একটু আলাদা। এখানে গোটা জেলার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এখানে এলে নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হওয়া যায়। তাই অন্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছি।
রানীশংকৈল থেকে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে এসেছে তাহমিনা বেগম। সে উপজেলার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে বলে, ‘এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু রাতের বৃষ্টি দেখে শঙ্কা দেখা দেয়। সকালের আকাশে জমে থাকা কালো মেঘের সঙ্গে আমার মনের শঙ্কাও কেটে যায়। এখানে এসে রঙিন আয়োজন দেখে মনটাই ভরে গেল।’
এ সময় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এলাকার শিক্ষার্থী জেরওন নিগার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, ‘এই উৎসবে সময়মতো যোগ দিতে ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ি। এখানে এসে দেখি, আমার আগেও অনেকেই চলে এসেছে।’