নড়িয়ায় বিজয় মিছিল কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেরার ডগরি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয় মিছিল কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার ডগ্রি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।

নড়িয়া থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল প্রথম ধাপে নড়িয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে জয়ী হয়েছেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হক। আর পরাজিত হন নড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মামুন মোস্তফা। নশাসন ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদার ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাদের মুন্সি মামুন মোস্তফাকে সমর্থন করেন। আর বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির, নুরুজ্জামান হাওলাদারসহ তাঁদের স্বজনেরা ইসমাইল হকের পক্ষ নেন।

গতকাল ফলাফল ঘোষণার পর সন্ধ্যায় নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির ও নুরুজ্জামান হাওলাদারের নেতৃত্বে ডগ্রি বাজারে বিজয় মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের বাসভবন ও বিপণিবিতানে হামলা করা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দেলোয়ার তালুকদারসহ দুই পক্ষের ১৩ জন আহত হন। দেলোয়ার তালুকদারের বিপণিবিতানের ১০টি দোকানের শাটার ভাঙচুর করা হয়।

পরে রাতে দেলোয়ারের সমর্থকেরা ডগ্রি মাদবর কান্দিতে মাদবর বাড়িতে হামলা করেন। সেখানে ১০টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। ঘরের আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ৮-১০টি গবাদিপশু ও একটি মোটরসাইকেল লুট করা হয়। হামলায় আমেনা বেগম ও লুৎফা বেগম নামের দুই বয়স্ক নারীকে মারধর করা হয়।

চিকিৎসার জন্য দেলোয়ার তালুকদারকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী ডালিয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী রাজনীতি করেন। তিনি একজন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইসমাইল হক ক্ষুব্ধ হন। তাঁর সমর্থকেরা বিজয় মিছিল করে আমাদের বাড়ি ও মার্কেটে হামলা চালান। আমার স্বামী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছেন।’

‘নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির ও নুরুজ্জামান হাওলাদারকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। নুরুল আমীনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী জামশেদা আক্তার ফোন ধরেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী ওই ঘটনায় জড়িত নন। তবুও রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।’

পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুন মোস্তফা বলেন, ‘ইসমাইল হক জয়ী হওয়ার পর আমার কর্মীদের মারধর করছেন। তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। আমরা এসব ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছি।’

এ সম্পর্কে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসমাইল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কর্মীদের বিজয় মিছিল না করার জন্য বলেছিলাম। তারপরও ডগ্রিতে একটি মিছিল করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদার তাঁর লোকজন নিয়ে ওই মিছিলে হামলা করেন। এতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গত রাতে দেলোয়ারের লোকজন আমার সমর্থক মাতবর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। সেখানে নারীদের মারধর করা হয়েছে।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ডগ্রিতে বিজয় মিছিল কেন্দ্র করে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় ৯ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।