‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি দরকার’
আমরা চামচের এক দিকে যে ছবি দেখতে পাই, চামচ উল্টালে ছবিও উল্টে যায় কেন? ব্ল্যাকহোল ধ্বংস হয় না কেন? নাক বন্ধ করে পেঁয়াজ কাটলে চোখে ঝাল লাগে না কেন? ভূত দেখতে পাই না, তবু ভয় লাগে কেন? কাচের দণ্ডে পানির ফোঁটা সামনে থেকে দেখলে স্বচ্ছ আর তির্যকভাবে দেখলে কালো লাগে কেন?
রাজশাহীতে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা উৎসবে অংশ নেওয়া খুদে শিক্ষার্থীরা এমন সব প্রশ্ন করেছে অতিথিদের কাছে। অতিথিরা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি উৎসাহ দেখে অভিভূত হয়ে যান। অতিথিরা বললেন, এই তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হবে। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় উৎসবের একঝাঁক বেলুন উড়ে যায় আকাশে।
প্রথম আলোর বিজ্ঞান সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা ও মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে। সহযোগিতা করছে প্রথম আলো রাজশাহী বন্ধুসভা।
ভেন্যু প্রধান ও রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক উৎসবের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে জাতীয় সংগীত শুরু হতেই নাচোল থেকে ৩১ জন শিক্ষার্থী হাজির হলে তাদের উদ্দেশে সবাই একযোগে করতালি দেয়। তারা রাজশাহী থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের নাচোল রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড়ে ট্রেনে উঠতে পারেনি। ট্রেনে উঠতে না পারা সেই শিক্ষার্থীরা আলাদা গাড়ি ভাড়া করে সড়কপথে এসেছে। তাদের উদ্দেশে দেওয়া করতালি যেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে যায়।
এরপর বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা পতাকা উত্তোলন করেন বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হুমায়ূন কবির। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. সাহেদ জামান।
স্বাগত বক্তব্যে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক বলেন, উন্নত, সমৃদ্ধিশালী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি দরকার। এই তরুণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের বাইরে প্রথম আলোর বিজ্ঞানচিন্তা ও বিকাশ এ কাজ করে যাচ্ছে। এটাকে একটি আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।
হুমায়ূন কবির বলেন, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিকাশ কাজ করে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানচিন্তাকে তাঁরা পাশে পেয়েছেন। এ কারণেই দেশব্যাপী তাঁরা এই আয়োজনটা করতে পারছেন। যাতে আগামী প্রজন্ম বিজ্ঞানমনস্ক হয়, দেশকে এগিয়ে নেয়।
উৎসবের উদ্বোধনকালে অধ্যাপক মো. সাহেদ জামান বলেন, আজকে দেশের সব মিলিয়ে ১৯-২০ কোটি মানুষ। এটা এ দেশের বিশাল সম্পদ। কিন্তু সঠিক চিন্তা ও গাইডলাইনের অভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। এ জন্য পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। প্রথম আলোর বিজ্ঞানচিন্তা ও বিকাশ সেখানে এগিয়ে এসেছে। আরও উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকার ও অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে।
সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীদের কুইজ পরীক্ষা ও প্রজেক্ট প্রদর্শনী শুরু হয়। এতে রাজশাহী অঞ্চলের ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮৮ জন শিক্ষার্থী কুইজে এবং ২৪টি প্রজেক্ট নিয়ে অংশ নিয়েছিল আরও ৭২ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শেষে কলেজ মিলনায়তনে জাদু দেখান শিল্পী রাজীব বসাক। শিশুশিল্পী সৌপ্তিক দাস ও সুমাইয়া নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তথাপি আজাদ।
বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর পর্ব। মজার মজার প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা পুরস্কার জিতে নেয়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক রবিউল হক, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জহিরুল ইসলাম ও বিকাশ কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির। এই পর্ব পরিচালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ। এই পর্বের শেষে চলে আসে কুইজ ও প্রজেক্ট বিজয়ীদের নাম। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে মঞ্চে আরও আসেন অধ্যক্ষ মো. আবদুল খালেক, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, প্রথম আলোর রাজশাহী নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও রাজশাহী ম্যাথক্লাবের সভাপতি মাসুদ রানা।
কুইজে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিকে ১০ জন করে এবং প্রজেক্টে মোট ১২টি দলকে (এক বা একাধিক শিক্ষার্থী) বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। মাধ্যমিকে কুইজ বিজয়ীরা হচ্ছে শাকীন সালেহ, তানজীব নুবা, তাসনিম ফেরদৌস, শামসুজ্জামান, ওমর ফারুক, জুলফিকার নাইম, আফিয়া ইবনাত, নাতিশা আক্তার, ওয়াহিদ হাসান ও জুবাইর জাহান। নিম্নমাধ্যমিকে আতিকা বিনতে রেজা, উম্মে হামীমা হিবা, ফাহমিদা আক্তার, ইফতিখার আহমেদ, ফারহান শাহরিয়ার, আবদুল্লাহ আল আরাবী, মোহিম আলী, মায়া খাতুন, সামিহা আক্তার ও নাজনুর নিথীর।
প্রজেক্ট বিজয়ীরা হচ্ছে মাহদি বিনতে ফেরদৌস; আবদুল্লাহ হিল কাফি ও তার সহযোগী মুশফিক জাহান; তাসনীম আলম; ঔড়ব আজাদ ও তার সহযোগী ফারহান; আয়েশা পারভীন ও তার সহযোগী ইশরাত জাহান ও সুবর্ণা আক্তার; মুশফিকুর রহমান ও তার সহযোগী শাহরিয়ার নাফিস ও কবির হোসেন; নূর আহমেদ ও তার সহযোগী আবদুল হাদি ও সাদ আরাফ; নাভিদ জামান ও তার সহযোগী ফারহান আঞ্জুম ও আবদুল মোনায়েম; নাবিল আহমেদ ও তার সহযোগী আরাফাত হুসাইন; নাদিম শাহরিয়ার; তাসনিম ফেরদৌস ও তার সহযোগী ইসতারাদ হোসাইন ও জুনায়েদ আজম এবং নাবিলা তাবাসসুম ও তার সহযোগী সারাহ নাহিয়ান ইসলাম।
এরপর আয়োজকদের পক্ষ থেকে ভেন্যু প্রধান রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। উৎসবের শেষে ছিল বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিদের ফটোসেশন।