প্রথম আলো শুধু পাঠকদের জন্য খবর প্রকাশ করেই বসে থাকে না; জাতি গঠন, মানবিক কাজ, দেশপ্রেমে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা কাজে প্রথম আলো নিজেদের আলো ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা। যখন দেশের শিক্ষকদের পদে পদে অবমূল্যায়ন, এমন সময়ে আইপিডিসি ও প্রথম আলো যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২২ উপলক্ষে ফরিদপুরে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ সোমবার বিকেলে শহরের জেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রথম আলোর ফরিদপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিপ্রা গোস্বামীর সঞ্চালনায় এ সুধী সমাবেশে একে একে শিক্ষক, সাহিত্যিক, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশার সুধীজন আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শামসুল হক বলেন, ‘আমি জীবনে খুব কম ভয় পাই। আজকে এই অনুষ্ঠানে এসে এত গুণীজন দেখে আমার বুক কেঁপেছে। আমি একটা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি ৫০ বছর। এখন স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি। সে অনুযায়ী শিক্ষক নেই। শিক্ষক বাড়াতে হবে। একজন শিক্ষক কখনোই ১০০ ছাত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আরেকটা ব্যাপার, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে আসতে হবে শিক্ষিত লোক। অনেক জায়গায় দেখা যায়, অশিক্ষিত লোক এসে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়। এটা বন্ধ করতে হবে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব ও গবেষক বিপ্লব বালা বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মান করা জরুরি। আমাদের এখন মানুষ হতে হবে। কেবল আগের শিক্ষকদের স্মৃতিচারণা নয়, বর্তমানের শিক্ষকদেরও ভালো করার বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে।’
অধ্যাপক শিপ্রা রায় বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা শুরু হয়, এটা সম্পর্কে আমরা তখন থেকেই জানি। আমার ভাশুর প্রয়াত জগদীশ চন্দ্র ঘোষ ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি এই পুরস্কার চালুর প্রথম বছরই পুরস্কার পেয়েছেন।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘পুরস্কারের আসলে কোনো আর্থিক মূল্য হয় না। আমরা কেন যেন শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপণ। প্রথম আলো যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমি মনে করি, এটা শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করবে।’
সদরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কাকলি মুখোপাধ্যায় তাঁকে দেওয়া তাঁর ছাত্রের একটা মেসেজ সবাইকে পড়ে শোনান। মেসেজটা ছিল, ‘মায়ের ঋণ সন্তান কখনো শোধ করতে পারবে না। আমিও আপনার ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। আমার মা চলে গেছেন। আপনার মাঝেই আমার মায়ের অভাবটা পূরণ করি। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আমাকে যেন তিনি মায়ের কাছে অকৃতজ্ঞ না করেন।’
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ফরিদপুরের সভাপতি এম এ জলিল বলেন, ‘আমি যে চিকিৎসক হয়েছি, তার পেছনে অবদান শিক্ষকদের। তবে এখন শিক্ষকতা কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
কবি জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘এখনকার শিক্ষকেরা চাকরি পাওয়া, টাকা বানাতে ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। কেউ মানুষ বানাতে চান না। ক্যারিয়ারের চেয়ে মানুষ হতে হবে আগে, এটা আমাদের বুঝতে হবে।’
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ফরিদপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী, ফরিদপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ মো. আক্তারুজ্জামান, মেরিন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ সামাদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শরীফ মো. আমিরুদ্দিন, আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক শাহজাহান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান ও আমিনুর রহমান। বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায় কর্মকার, শেখ আবদুস সামাদ, মোশায়েদ হোসেন ঢালী, আইনজীবী মানিক মজুমদার, উদীচীর সভাপতি আবদুল মোত্তালিব, আইপিডিসির ফরিদপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রথম আলো শুধু পাঠকদের জন্য খবর প্রকাশ করেই বসে থাকে না; জাতি গঠন, মানবিক কাজ, দেশপ্রেমে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা কাজে প্রথম আলো নিজেদের আলো ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা। যখন দেশের শিক্ষকদের পদে পদে অবমূল্যায়ন, সে সময় এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ায় প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তাঁরা। তাঁরা বলেন, এখন অনেকেই শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেন না। এমন সময়ে আইপিডিসি ও প্রথম আলো যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
অনুষ্ঠানে ‘আখতার স্যার’, ‘আলীনুর স্যার’, ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামের তিনটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানো এ ভিডিও চিত্র দেখে উপস্থিত বেশির ভাগ অতিথি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন ফরিদপুর বন্ধুসভার সদস্যরা।
আইপিডিসি-প্রথম আলো ২০১৯ সাল থেকে শিক্ষকদের এ সম্মাননা দিয়ে আসছে। মনোনীত শিক্ষকদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রিয় শিক্ষকদের নির্বাচিত করা হয়। আয়োজকেরা জানান, অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এ মনোনয়ন দেওয়া যাবে। অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া ওই ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণের পর ডাকযোগেও মনোনয়ন পাঠানো যাবে। এ মনোনয়ন কার্যক্রম চলবে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।