যেসব দেশ থেকে আনা হয় কুকুর-বিড়ালের খাবার
২০২২ সালের শেষের দিকে দেশীয় ও সংকর জাতের দুটি বিড়াল পালন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাইরুন্নেসা সুলতানা। শুরুতে বিড়ালকে ভাত, মুরগি, মাছ ইত্যাদি খেতে দিতেন তিনি। তবে এক বছর ধরে ঘরের খাবারের পাশাপাশি আমদানি করা খাবার দেওয়া শুরু করেছেন তিনি। খাইরুন্নেসা বলেন, দেশীয় খাবারের পাশাপাশি আমদানি করা শুকনা খাবারগুলো ব্যবহার করেন তিনি। এর কারণ খাবারের মান ও গুণাগুণ।
জানা গেছে, দেশে করোনা মহামারির পর কুকুর-বিড়াল পোষার প্রবণতা বেড়েছে। একসময় পোষা প্রাণীদের খাবার হিসেবে ঘরের খাবার যেমন ভাত, মাছ, মাংস দেওয়া হতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি করা বিদেশি খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে আমদানি বেড়েছে পোষা বিড়াল ও কুকুরের খাবারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই দুই প্রাণীর প্যাকেটজাত খাবারের আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৮৭ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২৬০ টন কুকুর ও বিড়ালের প্যাকেটজাত খাদ্য আমদানি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৪৩৮ টন। এই অর্থবছরে প্রায় ৫৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৪২৭ টন আমদানি হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। এই অর্থবছরে তুরস্ক থেকে আমদানি হয়েছে ৫১৬ টন খাবার।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কুকুর-বিড়ালের প্যাকেটজাত খাদ্য আমদানি হয়েছে ৩৩৬ টন। প্রায় ২২৬ টন আমদানি হয়েছে চীন থেকে। অন্যদিকে কেবল ১১ টন আমদানি হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে। আমদানিকারকেরা বলেন, একসময় দেশের বাজারে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা খাদ্যের চাহিদা বেশি ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক থেকে আমদানি করা খাবারের চাহিদাই বেশি। তুরস্কের খাবারগুলো তুলনামূলক কম দামের।
আমদানি করা খাদ্যের মধ্যে রয়েছে রয়্যাল ক্যানিন, পেডিগ্রি, হুইস্কাস, স্মার্ট হার্ট, জাঙ্গাল, ক্যালিশিয়া, বোনাসিবোসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড। মূলত শুকনা ও ভেজা এই দুই ধরনের খাবার পাওয়া যায় বিভিন্ন পেট শপে। ভেজা খাবারের তালিকায় রয়েছে টুনা, চিকেন ফ্লেভার পেলেট ইত্যাদি। এর মধ্যে শুকনা প্যাকেটজাত খাবারের চাহিদাই বেশি।
পোষা প্রাণীর খাদ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সিটিজি পেট শপের স্বত্বাধিকারী জিয়া উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারির সময় থেকে কুকুর বা বিড়াল পোষার প্রবণতা বেড়েছে। করোনার আগের তুলনায় গ্রাহকসংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারি ও পরবর্তী সময় থেকে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো পোষা প্রাণীর যত্ন ও মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি শুরু করে। এর অংশ হিসেবে সড়কের অসুস্থ ও মালিকানাহীন কুকুর-বিড়াল উদ্ধার করা হয়। এরপর এসব প্রাণী লালন–পালনকারী ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে।
চট্টগ্রাম জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, করোনার আগে প্রতিদিন একটি বা দুইটি পোষা প্রাণী আনা হতো হাসপাতালে। বর্তমানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮টি প্রাণী আনা হয় চিকিৎসার জন্য। যেহেতু পোষা প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই কর্মকর্তাদেরও সেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।