৪০ বছর ধরে ‘চারার ফেরিওয়ালা’ বাগমারার গিয়াস
পায়ে চটি, গায়ে শীতের পোশাক আর কাঁধে ভার। ভারে ঝুড়িভর্তি গাছের চারা নিয়ে ছুটে চলেছেন এক বৃদ্ধ (৭৩)। বয়সের কারণে জোরে হাঁটতেও পারছেন না। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে এভাবে ৪০ বছর ধরে ছুটে চলেছেন তিনি। ঘুরে ঘুরে গাছের চারা বিক্রি করায় লোকের কাছে তিনি ‘চারার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
এই ‘চারার ফেরিওয়ালা’র নাম গিয়াস উদ্দিন (৭৩)। তিনি রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার চানপাড়া গ্রামে থাকেন। তবে নিজের বাড়ি ছিল পৌরসভার খাজাপাড়া গ্রামে। বিয়ের সূত্রে চানপাড়াতে তাঁর বসবাস।
গিয়াস উদ্দিন দিনমজুর ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর আগে বাজার থেকে ফল কিনে খাওয়ার পর কিছু বীজ বাড়ির পাশে ফেলেছিলেন। সেখান থেকে চারা গজালে কয়েকটা বাড়ির পাশে রোপণ করেন। অতিরিক্ত কিছু চারা বিক্রি করে দেন। এভাবেই শুরু তাঁর চারা তৈরি ও বিক্রি। অন্যরা নার্সারি থেকে বা হাটে নিয়ে চারা বিক্রি করলেও তিনি চারা নিয়ে ছোটেন বাড়ি বাড়ি।
সম্প্রতি বাগমারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়াসের সঙ্গে দেখা হয়। পরিষদের মিলনায়তনের পাশে নতুন বাগানে ফুল ও ফলের চারা সরবরাহ করতে এসেছিলেন। কথায় কথায় তিনি বলেন, ফল খেয়ে, গাছতলা থেকে কুড়িয়ে ও মানুষের বাড়ি থেকে বীজ সংগ্রহ করে তিনি চারা তৈরি করেন। কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও নিজের পর্যবেক্ষণ ও নাটোরের একটি নার্সারিতে কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করেন তিনি। এখন তিনি নিজের নার্সারিতে ১৭ রকমের ফুল, ফলদ ও বনজ গাছের চারা তৈরি করেন। লোকজনের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি চারা তৈরি করেন।
গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রতিদিন সকালে নার্সারি থেকে চারা ঝুড়িতে ভরে গ্রামে নিয়ে যান। লোকজন পছন্দমতো চারা কিনে নেন। আবার অনেকে তাঁদের পছন্দের চারার চাহিদা দিলে পরে তা পৌঁছে দেন। সাত কাঠা জমিতে তিনি নার্সারি গড়ে তুলেছেন।
গিয়াসের স্ত্রী রফেলা বেগম বলেন, স্বামীর সঙ্গে তিনিও চারা পরিচর্যা করেন। প্রতিদিন সকালে স্বামীর ভারে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা সাজিয়ে দেন। চারা বিক্রির টাকায় তাদের সংসার চলে। দুই ছেলে–মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন।
খাজাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক আশরাফুল ইসলাম (৫১) বলেন, গিয়াসকে তিনি একই পেশায় দেখছেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি নিজেও চার কিনেছেন। তাঁর সবচেয়ে ভালো দিক, তিনি চারা দিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না, চারার খোঁজখবর নেন ও পরিচর্যার পরামর্শ দেন।
গত ৪০ বছরে পরিত্যক্ত জায়গায় নিজ উদ্যোগে অনেক গাছ লাগিয়েছেন দাবি করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, যত দিন পারবেন, এই পেশাতেই থাকবেন। তবে বয়সের কারণে এখন ভার বহন করতে কষ্ট হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, চারার ফেরিওয়ালা গিয়াস উদ্দিনের বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে তাঁকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।