কালকিনিতে টাকা বিতরণ ও পোলিং এজেন্টের ওপর হামলার অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর
মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে কালোটাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। সেই সঙ্গে ঈগলের এক নারী পোলিং এজেন্টকে নৌকার কর্মীরা কুপিয়ে আহত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব অভিযোগ করেন। তবে আবদুস সোবহান গোলাপ এসব অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেন।
গোলাপের কর্মীদের বিরুদ্ধে ঈগলের নারী এজেন্ট শোভা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আজ দুপুরে কালকিনি পৌরসভার দক্ষিণ ঠেঙ্গামারা এলাকার করিম হাওলাদারের স্ত্রী শোভা আক্তারকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। শোভা দক্ষিণ ঠেঙ্গামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ঈগলের পোলিং এজেন্ট। তাঁকে নৌকার কর্মী কাউন্সিলর অলিল হাওলাদারের নেতৃত্বে এক দল সন্ত্রাসী শোভার বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে শোভা আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শোভা আক্তারকে জখমের পাশাপাশি ওই সময়ে সন্ত্রাসীরা দুটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।’
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমার কর্মী এসকেন্দার খাঁকে কুপিয়ে হত্যার অন্যতম আসামি লক্ষ্মীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর হক ব্যাপারী। হত্যা মামলার এই আসামি নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
আমার কর্মীদের পাশাপাশি আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নৌকার প্রার্থী গোলাপ নির্বাচনের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে নির্বাচন স্থগিত করার পাঁয়তারা করছেন। ভোট গ্রহণের আগের দিন বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা ও ভাঙচুর করার পরিকল্পনাও গোলাপের রয়েছে।
গোলাপের বিরুদ্ধে টাকা বিতরণের অভিযোগ তুলে তাহমিনা বলেন, ‘আজ সকালে পৌরসভার ঝাউতলা গ্রামে নৌকার কর্মী শারমিন জাহান ওরফে হেলেনা, জামাল তালুকদার, জামাল সরদারসহ কিছু কর্মী টাকা বিতরণ করছিলেন। অবৈধভাবে নৌকার কর্মীরা ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ করায় আমাদের ঈগল প্রতীকের স্থানীয় কর্মীরা তাঁদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু নৌকার কর্মীরা আমার ঈগল প্রতীকের কর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বাগ্বিতণ্ডা শুরু করলে আমার কর্মীরা ঝামেলা এড়াতে ওই স্থান ত্যাগ করেন।’
তাহমিনা বলেন, ‘তিনি (আবদুস সোবহান গোলাপ) নিরুপায় হয়ে এখন তাঁর কালোটাকা ভোটের মাঠে ছড়ানো শুরু করেছেন। তাঁর বাজেট ১৩ কোটি টাকা। এই টাকার অর্ধেক খরচ করবেন ভোট কেনার জন্য, আর অর্ধেক তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য তাদের পেছনে খরচ করবেন। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, আর্মি, বিজিবিসহ যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের তিনি এই কালোটাকা দিয়ে ম্যানেজ করার একটি পরিকল্পনা করেছেন।’ তাহমিনা বলেন, ‘কালোটাকা বিতরণের বিষয়ে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং তাঁরা প্রকাশ্যেই নৌকার পক্ষে নির্বাচন করে যাচ্ছেন। যা ভোটারদের মধ্যে নিরপেক্ষ ও অবাধ ভোট গ্রহণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি করছে।’
প্রাণনাশের হুমকির কথা জানিয়ে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমার কর্মীদের পাশাপাশি আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নৌকার প্রার্থী গোলাপ নির্বাচনের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে নির্বাচন স্থগিত করার পাঁয়তারা করছেন। ভোট গ্রহণের আগের দিন বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা ও ভাঙচুর করার পরিকল্পনাও গোলাপের রয়েছে।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব আজগুবি কথা তিনি (তাহমিনা বেগম) কোথা থেকে পান? তিনি শুরু থেকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা বলে যাচ্ছেন। ১৩ কোটির টাকার এই হিসাব তিনি পেলেন কোথায়? প্রমাণ জানতে চান আপনারা। আমি নই, তিনি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এসব আজগুবি মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন।’
আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাহমিনা বেগম দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্য। আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ঈগলের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কালকিনিতে এসকেন্দার খাঁ (৭০) নামে ঈগলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
এই আসনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাহমিনা বেগম ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল খালেক এবং জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।