ধুনটে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে জলাশয় দখল ও মাছ লুট করার অভিযোগ
বগুড়ার ধুনটে একটি জলাশয় দখল করে কয়েক লাখ টাকার মাছ লুট করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছয় একরের বেশি আয়তনের জলাশয়টি এত দিন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দখলে ছিল। জলাশয়টির দখল নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। দুই দিন পর ৭ আগস্ট স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জলাশয়টি দখল করেন। ওই দিন মথুরাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক টুটুল মাহমুদ বাদী হয়ে ২৫ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তবে পুলিশ এখনো তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।
অভিযোগ উঠেছে, ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ ও চৌকিবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল হক খান জলাশয়টি দখলের নেপথ্যে ইন্ধন দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
তবে তৌহিদুল আলম বলেন, জলাশয় দখলের সঙ্গে জড়িত নন। আপেল মাহমুদ ও রেজাউল হক খান দলীয় পরিচয়ে জলাশয় দখলে যাননি। জলাশয়টি এত দিন আওয়ামী লীগের লোকজনের জবরদখলে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় ওই দুই নেতা এলাকাবাসীর পক্ষ নিয়েছেন। তবে তাঁরা জলাশয়ে মাছ ধরতে যাননি।
ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ও মথুরাপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি রুদ্রবাড়িয়া ও পীরহাটি মৌজায় ‘অন্ধ পুকুর’ নামে জলাশয়টির মালিক টাঙ্গাইলের করটিয়ার সাবেক ডেপুটি স্পিকার হুমায়ুন খান পন্নীর পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ও মথুরাপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি রুদ্রবাড়িয়া ও পীরহাটি মৌজায় ‘অন্ধ পুকুর’ নামে জলাশয়টির মালিক টাঙ্গাইলের করটিয়ার সাবেক ডেপুটি স্পিকার হুমায়ুন খান পন্নীর পরিবার। ৬ একর ৪৪ শতাংশ আয়তনের জলাশয়টি মূল মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের মোজাফফর রহমান ও তাঁর পরিবারের লোকজন। মোজাফফর রহমানের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করছেন মথুরাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও পীরহাটি গ্রামের বাসিন্দা টুটুল মাহমুদ।
এদিকে মূল মালিকের কাছ থেকে লিজ নেওয়ার দাবি করে জলাশয়টি দীর্ঘদিন ধরে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য মামুন খন্দকার ও তাঁর লোকজন। এ নিয়ে আদালতে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলা চলমান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মামুন খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা জলাশয় দখল করে মাছ লুট করেন। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা টুটুল মাহমুদ বাদী হয়ে ৭ আগস্ট মামুন খন্দকারসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে দ্বিতীয় দফায় পুকুরে মাছ লুট করেন। এ নিয়ে ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলমের মধ্যস্থতায় ২৩ আগস্ট বগুড়া জেলা আদালতের বার ভবনে দুই পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মামুন খন্দকার ও তাঁর লোকজন পরে আবার পুকুরটি দখলে নেন।
লিজগ্রহিতা মোজাফ্ফর রহমানের কাছ জলাশয়টি বন্ধকি নিয়ে মাছ চাষ করছি। কিন্তু ছাত্রদল নেতা মামুন খন্দকার দুই দফা মাছ লুট করে জলাশয়টি জবরদখল করেছেন।টুটুল মাহমুদ, যুবলীগ নেতা
যুবলীগ নেতা টুটুল মাহমুদ বলেন, ‘জমিদারের লিজগ্রহিতা মোজাফ্ফর রহমানের কাছ জলাশয়টি বন্ধকি নিয়ে মাছ চাষ করছি। কিন্তু ছাত্রদল নেতা মামুন খন্দকার দুই দফা মাছ লুট করে জলাশয়টি জবরদখল করেছেন। এ বিষয়ে মামুন খন্দকারসহ ২৫ জনকে আসামি করে ধুনট থানায় অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া বিএনপি নেতা তৌহিদুল আলম, আপেল মাহমুদ ও রেজাউল হকের ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা পুকুর থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা মামুন খন্দকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জমিদার পরিবারের কাছ থেকে জলাশয়টি ইজারা নিয়ে আমরা মাছ চাষ করে আসছি। কিন্তু আদালতের ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে টুটুল মাহমুদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন জলাশয়টি জবরদখল করেছিলেন। এ জন্য জলাশয়টি আমরা দখলে নিয়েছি।’
দীর্ঘদিন ধরে জমিদার পরিবারের কাছ থেকে জলাশয়টি ইজারা নিয়ে আমরা মাছ চাষ করে আসছি। কিন্তু আদালতের ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে টুটুল মাহমুদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন জলাশয়টি জবরদখল করেছিলেন। এ জন্য জলাশয়টি আমরা দখলে নিয়েছি।মামুন খন্দকার, ছাত্রদল নেতা
মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ‘১৯৪৯ সাল থেকে টাঙ্গাইলের জমিদার পরিবারের কাছ থেকে জলাশয়টি লিজ নিয়ে আমরা ভোগদখল করে আসছি। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। বর্তমানে পুকুরে মাছ চাষ করছেন টুটুল মাহমুদ। অথচ মামুন খন্দকার বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পুকুর থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করেছেন।’
ধুনট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘জলাশয় দখল করে মাছ লুটের সঙ্গে দল বা আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। চার বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ১০ লাখ টাকার মাছ লুট করে জলাশয়টি জবরদখল করেন। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের মধ্যে বিএনপির লোকজন আছেন। ৫ আগস্টের পর ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মাছ ধরতে গেলে দুই পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সালিস হয়। সেখানে আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোজাফ্ফর পক্ষ ৭৫ শতাংশ এবং মামুন খন্দকার পক্ষ ২৫ শতাংশ ভোগদখলের মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন তাঁরা সালিসের সিদ্ধান্ত না মেনে উল্টো বিএনপি ও দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’