সিলেটের ওসমানী হাসপাতাল
রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হামলা-ভাঙচুর, আটক ৪, ধর্মঘটের ডাক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের
এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন ওই রোগীর স্বজনেরা। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারী চারজনকে আটক করেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সুচিকিৎসা না পেয়ে ওই রোগী মারা গেছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার করোনারি সমস্যা নিয়ে এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ বিকেলে তিনি মারা যান। এ সময় রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজন ও স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভাঙচুর করে গ্লাস, চেয়ার, টেবিল, ইজিসি মেশিনসহ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন।
হামলাকারীরা অনেক ওষুধও বিনষ্ট করার পাশাপাশি দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদে হুমকি দেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং চারজনকে আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, আবদুল মালিক (৫৪), সাবেল আহমদ, জুবেল আহমদ ও জুয়েল আহমদ। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা চাই’ উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। রাত আটটার দিকে পরিষদের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোগীর স্বজন নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালায়। তারা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ক্রমাগত ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান এবং শারীরিক হেনস্তা করার চেষ্টা চালায়। এ ছাড়া তাঁরা কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কক্ষ ও নার্সেস স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ঘটনা প্রমাণ করে হাসপাতালে চিকিৎসকদের কোনো সুস্থ কর্মপরিবেশ নেই এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই।
হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করবেন।
যোগাযোগ করলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর অবস্থা খুবই জটিল ছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আজ সোমবার দুপুরেও ওই রোগীকে দেখেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি মারা গেলে তাঁর স্বজনেরা আবেগের বশবর্তী হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তাঁরা এ সময় আনসার সদস্যদেরও মেরে আহত করেন। ধর্মঘট ডাকা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।