বাল্যবিবাহের ৪ মাসের মাথায় কিশোরী হলো লাশ, পরিবারের দাবি হত্যা
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় মিম খাতুন (১৬) নামের এক গৃহবধূর ‘ঝুলন্ত’ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর গ্রাম থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
লাশ উদ্ধার হওয়া মিম উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা সুজন আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের শাজাহান আলীর মেয়ে। সে স্থানীয় শ্রীরামপুর মোজাদ্দেদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। চার মাস আগে পারিবারিকভাবে সুজনের সঙ্গে তার বাল্যবিবাহ হয়েছিল।
মিমের বাবা ভ্যানচালক শাজাহান আলী অভিযোগ করেন, বিয়ের সময় ছেলেপক্ষের দাবি অনুযায়ী দেড় লাখ টাকা, রেফ্রিজারেটর, গয়নাসহ সংসারের জিনিসপত্র দেওয়ার কথা ছিল। তখন তিনি সব জিনিসপত্র একসঙ্গে দিতে পারবেন না, ধীরে ধীরে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মিমের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চাপে ১৫ দিন আগে যৌতুকের টাকার জন্য মিমকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন স্বামী সুজন ও শ্বশুর মোস্তফা। পরে সুজনের বাবা ও আত্মীয়স্বজন এসে কথাবার্তা বলে মিমকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর আবার নির্যাতন করে মিমকে মেরে ফেলেছেন।
শাজাহান আলী বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ দেখে মিমের গলায় রশি পেঁচিয়ে ঘরের সিলিংয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। এমনকি রাত পেরিয়ে গেলেও মিমের মৃত্যুসংবাদটা বাবার বাড়িতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শহিদুল ইসলামের ফোনকলে আমি মৃত্যুসংবাদ পেয়েছি। লাশের মুখে, কপালে, ঘাড়ে আঘাতের কালশিটে দেখা গেছে। অথচ শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে, মিম আত্মহত্যা করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে মিমের স্বামী সুজন আলী ও শ্বশুর মোস্তফার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কুর্শা ইউপির সদস্য শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে জানতে পারেন, সুজনের স্ত্রী মিম গলায় দড়ি দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করছে। তবে তার কপালে থেঁতলে যাওয়া একটা আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলায় রশি প্যাঁচানোর দাগও আছে। তিনি বলেন, ‘যত দূর শুনেছি, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।’
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। হত্যাকাণ্ড হলে সেভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।