বরিশালে মানব পাচার মামলায় প্রবাসী দুই ভাই ও ভাবির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
উচ্চ বেতনে কিউবায় নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ পথে ভানুয়াতুতে নিয়ে প্রতারণা করায় প্রবাসী দুই ভাই ও ভাবিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বরিশালে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে কাতারপ্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার, তাঁর স্ত্রী জান্নাতুর রহমান ও ছোট ভাই ভানুয়াতুপ্রবাসী পলাশ হাওলাদার। রায় ঘোষণার সময় আসামি জান্নাতুর আদালতে উপস্থিত থাকলেও প্রবাসী দুই ভাই পলাতক।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জসিম ও পলাশকে পৃথক দুই ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা দেওয়া হয়। আর জান্নাতুরকে পৃথক দুই ধারায় ১৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি লিয়াকত আলী খান ও এস এম সরোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মামলার বরাতে আদালতের বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা জানান, মামলার প্রধান সাক্ষী সজল জমাদ্দার ও বাদী মোফাজ্জেল হোসেন একই এলাকায় ব্যবসা করতেন। ব্যবসার সূত্র ধরে তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এর সুবাদে সজল জানান, তাঁর খালাতো ভাই পলাশ কিউবায় থাকেন। তাঁকে (সজল) পলাশ কিউবায় নিয়ে যাবেন। তখন মোফাজ্জেলকে সজলের সঙ্গে কিউবায় যাওয়ায় প্রস্তাব দিলে পলাশের সঙ্গে কথা বলে মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতনে মোফাজ্জেলও কিউবায় যেতে রাজি হন। শর্ত অনুযায়ী সজল ও মোফাজ্জেল দুজন মিলে কথিত কিউবাপ্রবাসী পলাশের বড় ভাই জসিম উদ্দীন ও তাঁর স্ত্রীকে ২১ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতা, দিল্লি, সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতুতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেখানে পলাশ তাঁদের দুজনসহ মোট ১০ জনকে নিয়ে একটি নির্জন বাড়িতে আটকে রাখেন। পরে সেখান থেকে তাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় নেওয়ার প্রস্তাব দেন পলাশ। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পলাশের ভাইসহ স্বজনদের সাত লাখ টাকা দেন তাঁরা দুজন। কিন্তু তাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়নি। ভানুয়াতুতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর সেখানে থাকা কয়েকজন পুলিশের কাছে ধরা দেন। পরে পুলিশ পলাশকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেওয়া আরও ১০৩ জনকে উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। পরে আইওএমের তত্ত্বাবধানে দেশে ফিরে আসেন সজল ও মোফাজ্জেল। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে আসামিরা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এ ছাড়া তাঁদের হত্যার হুমকি দেন।
বেঞ্চ সহকারী আরও জানান, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানব পাচার আইনে বরিশালে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মোফাজ্জেল হোসেন। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজনকে বাদ দিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারকাজ শুরু করা হয়। বিচারক ২৩ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আজ এ রায় দেন। মামলার অন্য দুই আসামি হারুন অর রশিদ ও এনামুল হক উচ্চ আদালতে ক্রিমিনাল মিসকেস দায়ের করলে আদালত রুল জারি করে এবং ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাঁদের বিচারকাজ স্থগিত আছে।
মামলার বাদী মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘মামলার রায়ে আমি অত্যন্ত খুশি। দ্রুত রায় কার্যকর হোক, আমি এটা চাই।’ আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নান বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।