ইয়াবা কারবারে কোটিপতি আমিন

  • আমিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে ১৮টি।

  • ২০১৯ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইয়াবা কারবারি সাইফুল করিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আমিন।

মো. আমিন

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মো. আমিন। টেকনাফ ও চট্টগ্রাম নগরে তাঁর জমি রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এসব সম্পদ অর্জনে আয়ের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি আমিন। ইয়াবার কারবার করে এসব সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা এক মামলায় গত বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে মো. আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম এই অভিযোগপত্র দেন।

তাঁর আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

অভিযোগপত্রে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে মো. আমিনের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগপত্রটি  গ্রহণের শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়নি। আসামি মো. আমিন পলাতক রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে  আদালতে পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হবে।

পুলিশ জানায়, মো. আমিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে ১৮টি। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা টেকনাফ হয়ে সারা দেশে পাঠানোর শীর্ষ কারবারিদের একজন আমিন। টেকনাফে তিনি পরিচিত ‘ইয়াবা আমিন’ নামে।

২০১৯ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইয়াবা কারবারি সাইফুল করিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় রয়েছে আমিনের। তাঁর মেয়ে তাসফিয়া আমিনের লাশ ২০১৮ সালের মে মাসে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে উদ্ধার হয়। লাশ উদ্ধারের সময় সুরতহাল প্রতিবেদনে সাক্ষী হয়েছিলেন সাইফুল। তাসফিয়া নগরের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

দুদক সম্পদ বিবরণী জমা করতে চিঠি দিলে মো. আমিন ২০১৮ সালের ২০ জুন তা জমা দেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে তাঁর আয়ের বাইরে সম্পদ পাওয়ায় পরের বছরের জুনে দুদক চট্টগ্রামের সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। পাঁচ বছর তদন্ত শেষে এই মামলায় আমিনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমিন নিজেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানিকারক দাবি করলেও ২০১১ সালের আগে তাঁর আয়ের কোনো উৎস ছিল না। আয়কর নথিতে তিনি যে আয়–ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছেন, সেখানে দেখা গেছে তাঁর আয়ের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি। কিন্তু এসব সম্পদ অর্জনে আয়ের বৈধ কোনো উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। তাঁর গৃহিণী স্ত্রী নাঈমা খানমের সঙ্গে যৌথভাবে অর্জন করা সম্পদও আমিনের।

জানতে চাইলে নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করেন মো. আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদকের মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।’ মাদকের ১৮ মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সব মামলা দিয়েছেন।

শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম নিজের মেয়ের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে সাক্ষী হওয়ার প্রসঙ্গে আমিন বলেন, ‘সাইফুল আমার পরিচিত কেউ নন, তিনিও চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। টেকনাফের লোক হওয়ায় তিনি এসে সাহায্য করেছেন।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে আমিনের ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পারিবারিক ও অন্যান্য খরচ করেছেন ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

তাঁর প্রাপ্ত মোট সম্পদ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈধ আয় পাওয়া গেছে ৪ কোটি ৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তাঁর আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সব কটি টেকনাফ ও চট্টগ্রাম শহরের ষোলোশহর এলাকায়। চট্টগ্রামের জমিটি ২০ শতক।

দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমিন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। ইয়াবার কারবার করেই তিনি এই কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ রয়েছে।