ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা
পরীক্ষা দিতে গিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা মারধরের শিকার হয়েছেন। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা গ্যালারির কক্ষে পরীক্ষা চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম আবদুল আলীম। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রক্টরিয়াল বডি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আবদুল আলীমকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে থানায় সোপর্দ করেন।
আবদুল আলীম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন আলীম। তাঁর ক্যাম্পাসে আসার খোঁজ পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আলীমকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা থানায় সোপর্দ করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অতর্কিত মারধরের শিকার হন তিনি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আলীম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী। তাঁরই ছত্রচ্ছায়ায় হলে সিট–বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের মারধর, মাদক সেবন, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, কোটা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় ক্যাম্পাসে কিছু ‘গ্যাং’ গড়ে উঠেছিল।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আলীম হলে থাকাকালে শিক্ষার্থীদের জোর করে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। হলের বেশির ভাগই কক্ষ তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। জিয়া হলে এমন কোনো রুম নেই, যেই রুমে আলীমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।
থানায় নেওয়ার পথে আবদুল আলীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আধা ঘণ্টা দেরিতে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিই। ভেবেছিলাম, দেরিতে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস মার্ক তুলে আগে আগে বের হয়ে যাব, কিন্তু বুঝতে পারিনি বিষয়টা এত দূর গড়াবে।’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আনা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই।’
বিভাগের শিক্ষকেরা বলেন, তাঁরা জানতেনই না এমন কেউ পরীক্ষা দিতে এসেছেন। পরীক্ষা চলাকালে বাইরে হট্টগোল দেখে সেখানে গিয়ে তাঁর (আবদুল আলীম) কথা জানতে পারেন। পরে তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রাহমান সুইট বলেন, ‘শিক্ষকদের সমন্বয়ে আমরা তাঁকে প্রোটেকশন দিয়ে সেখানে থেকে নিয়ে থানায় সোপর্দ করি। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর যাঁরা এসব দোসরকে প্রশ্রয় দেবে, তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় সোপর্দ করি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মব জাস্টিস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। এখন আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’