বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ–৫ বেড়েছে

সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জিপিএ–৫ পাওয়া এক শিক্ষার্থী ফলাফল দেখাচ্ছে তার মাকে। আজ বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে
ছবি: সাইয়ান

চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ–৫ বেড়েছে।  আবার ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ফলাফল ঘোষণা করেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন।  

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,  শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছেন। জিপিএ-৫ পাওয়া ও পাসের হার—দুই ক্ষেত্রেই মেয়েরা এগিয়ে রয়েছেন। ছেলেদের তুলনায় এবার মেয়েরা দ্বিগুণের বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার ১ হাজার ৩৬৩ জন ছাত্র ও ২ হাজার ৮০৪ জন ছাত্রী জিপিএ–৫ পেয়েছেন। অর্থাৎ ছেলেদের তুলনায় ১ হাজার ৪৪১ জন বেশি ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

শুধু জিপিএ-৫ নয়, গড় পাস ও বিষয়ভিত্তিক পাসের হারেও ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা। এবার এই শিক্ষা বোর্ডের মোট পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সেখানে মেয়েদের হার ৮৯ দশমিক ১৮ এবং ছেলেদের এই হার ৭৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।

 বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, শুধু এবার নয়, চার বছর ধরেই এই শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রীরা ফলাফলে এগিয়ে থাকার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। এটা অবশ্যই নারীশিক্ষার অগ্রগতির এক অনন্য উদহারণ।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার এই শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ–৫ প্রাপ্তির সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর দেশের সবচেয়ে বেশি পাসের হার ছিল বরিশালে; ৮০ দশমিক ৬৫। গত বছরের চেয়ে এবার ১ দশমিক ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে বরিশালে। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও বেড়েছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৯৩। এ বছর জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৭৪টি।
ঘোষিত ফলাফলে আরও দেখা যায়, চলতি বছর এই শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৮৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৯৯৩ জন ও ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯৪ জন। তাঁদের মধ্যে পাস করেছেন ৫৪ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৩৬৭ জন ও ছাত্রী ২৯ হাজার ৭২২ জন।

মেয়েদের জয়জয়কার

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে গত কয়েক বছরের মতো এবারও পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক এগিয়ে আছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিষয়ভিত্তিক পাসের হারে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগেও এগিয়ে মেয়েরা। বিজ্ঞান বিভাগে মেয়েদের পাসের হার যেখানে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ, সেখানে ছেলেদের হার ৯২ দশমিক ৩০ শতাংশ। মানবিক বিভাগে মেয়েদের পাসের হার ৮৫ দশমিক ৭৯, ছেলেদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মেয়েদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৮ শতাংশ হলেও ছেলেদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

পাস, জিপিএ-৫–এ শীর্ষে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাসের হার সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫১। এর পরের অবস্থানে আছে মানবিক বিভাগ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৮ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৭ দশমিক ২০।
এ ছাড়া জিপিএ-৫ সবচেয়ে বেশিও পেয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে মোট দুই হাজার ২৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর মানবিক বিভাগ থেকে এক হাজার ৫৮২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

২১ প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস
চলতি বছর এই  শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩৪২টি কলেজের ৬৬ হাজার ৮৭ শিক্ষার্থী ১৩৭টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২১টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঝালকাঠি জেলায় সাতটি, বরিশাল জেলায় পাঁচটি, ভোলা জেলায় চারটি ও পটুয়াখালী জেলায় তিনটি করে কলেজে সবাই শতভাগ পাস করেছেন। বাকি দুটি জেলা বরগুনা ও পিরোজপুরে একটি করে কলেজের পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছেন।  

৫০ শতাংশের ওপরে পাস ২৮৮ কলেজে
ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ৫০ শতাংশের ওপরে পরীক্ষার্থী পাস করেছেন ২৮৮টি কলেজে। আর ৫০ শতাংশের নিচে পরীক্ষার্থী পাস করেছেন ৩০টি কলেজে। এর মধ্যে ২০ শতাংশের নিচে দুটি এবং ১৫ শতাংশের নিচে একটি কলেজের পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। তবে এ বোর্ডে শূন্য পাস করেছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, এবার এমন কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য সব অবদান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের।

পাসের হারে শীর্ষে ঝালকাঠি, তলানিতে পটুয়াখালী

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হারে সবার শীর্ষে রয়েছে ঝালকাঠি জেলা। এ জেলায় মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভোলা জেলার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৬। আর গত বছর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বরিশাল জেলা এবার ৮৩ দশমিক ৯৪ পাসের হার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এ ছাড়া চতুর্থ অবস্থানে থাকা পিরোজপুর জেলার পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৪। পঞ্চম অবস্থানে থাকা বরগুনা জেলার পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ২। আর একেবারে তলানিতে থাকা পটুয়াখালী জেলার পাসের হার ৭৪ দশমিক ৮২।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার ফলাফল আরও ভালো হয়েছে।  ২০২৩ সালে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫, সেখানে এবারে গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫। এই ভালো ফলাফলের পুরো কৃতিত্ব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের।