কুমিল্লার প্রধান শিক্ষক নেই ৭৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

শিক্ষকপ্রতীকী ছবি

কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় ৭৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২ হাজার ১০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন। বাকি বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সে হিসাবে তিন ভাগের এক ভাগের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক চলতি দায়িত্ব পালন করেন। এতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ হয়। ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হয়ে থাকেন। পদোন্নতির মাধ্যমে যাঁরা প্রধান শিক্ষক হবেন, তাঁদের মধ্যে লাকসাম, ব্রাহ্মণপাড়া ও লালমাই উপজেলার নথি মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে পদ পূরণ হবে এই তিন উপজেলায়। অন্যদের পদোন্নতির নথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে আছে। ২০১৩ সালে রেজিস্ট্রি বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, আদর্শ সদর উপজেলার ১১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। লাকসামে ৩৯, দেবীদ্বারে ৫৩, মুরাদনগরে ৫৯, দাউদকান্দির ৯৩, চৌদ্দগ্রামে ৪৬, ব্রাহ্মণপাড়ার ১০৮টির মধ্যে ৫২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।

এ ছাড়া বরুড়া উপজেলার ১৫৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩টি, বুড়িচংয়ের ৪৮, চান্দিনার ৫১, হোমনার ৩৫, নাঙ্গলকোটের ৫১, মেঘনার ৩৯, মনোহরগঞ্জের ৬২, তিতাসের ৩০, সদর দক্ষিণের ৩৯ ও লালমাই উপজেলার ২৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।

গত রোববার সকালে গুলবাগিচা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীতে ঠাসা। শিক্ষকেরা কেউ ক্লাস নিচ্ছেন। কেউ কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার ক্লাস নিয়ে এক ফাঁকে তাঁর কক্ষে আসেন। তখন তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাফিজ ভূঁইয়া অবসরে যান। এর পর থেকে তিনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে শিক্ষার্থী বেশি। কাজের চাপ বেশি।

নগরের মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ওই বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩০০ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষকের সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকও নেই। এ বিদ্যালয়ের সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মহাসচিব সালেহা আক্তার বলেন, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে অন্তত ২৫ জন শিক্ষক দরকার। আছেন ১৯ জন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় চাপ আরও বাড়ে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, এ উপজেলায় অর্ধেকের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। বর্তমানে এ উপজেলার ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫টিতে প্রধান শিক্ষক আছেন।