দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হারিয়ে স্বামীর আকুতি, ‘সন্তানের লাশ কি পাব না?’

সড়ক দুর্ঘটনাপ্রতীকী ছবি

সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বেসরকারি সংস্থার মাঠকর্মী হনুফা বেগম। সকালে এক সহকর্মীর মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে ট্রাক্টর ধাক্কা দিলে মহাসড়কে ছিটকে পড়েন তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় নিয়ে রাখে পুলিশ।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার রামপুরা এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হন হনুফা। দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিহতের খবর পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্বামী আইনাল হক (৩০)। দুপুরে স্ত্রীর লাশ নিতে এসে অনাগত সন্তানের জন্য থানা ভবনের সিঁড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আহাজারি করতে করতে আইনাল বলতে থাকেন, ‘আমার সন্তানের লাশ কি পাব না? আমি মামলা করব না। পোস্টমর্টেম করতে দেব না। আমার ছেলেকে কাটতে দেব না।’ অনাগত সন্তানের জন্য বাবার আকুতি দেখে এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হনুফা পেশায় বেসরকারি একটি সংস্থার মাঠকর্মী। তাঁর কর্মস্থল ছিল বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নে। প্রতিষ্ঠানটির ইছাপুর শাখার ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেনের (৩৫) সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন হনুফা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর উপজেলার রামপুরা এলাকায় পৌঁছালে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক্টর পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে হনুফা মহাসড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। গুরুতর আহত ফারুককে জেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হনুফার বাবা সেলিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের আইনাল হকের সঙ্গে তাঁর বড় মেয়ে হনুফার বিয়ে হয়। তিনিও ওই গ্রামের বাসিন্দা। দুই মাস পর তাঁর মেয়ে প্রথম মা হতে যাচ্ছিলেন। হনুফার পুত্রসন্তানের মা হতে যাওয়ার খবরে উভয় পরিবারের সদস্যরা বেশ আনন্দে ছিলেন। কিন্তু সন্তান জন্মের আগেই সব শেষ হয়ে গেল।

হনুফার লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেলচালকের মাথায় হেলমেট থাকলেও হনুফার মাথায় হেলমেট ছিল না। মাথায় আঘাতের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।

খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারগুব তৌহিদ প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেল ও ট্রাক্টরটি জব্দ করা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। ট্রাক্টরচালক পলাতক। এ ব্যাপারে সড়ক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।