শেরপুরে ইফতারিতে ‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি’
খুরমা-খেজুর থেকে শুরু করে লাচ্ছি, বোরহানি, কলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, লাড্ডু, বুন্দিয়া আরও কত রকম খাবার। কিন্তু এসবের মধ্যে শেরপুরের রোজাদারদের ইফতারির তালিকায় ‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি’র কদর অন্যরকম।
শেরপুর জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টির মধ্যে অন্যতম ‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি’। এ মিষ্টি মূলত শরৎকালে তৈরি হলেও এখন রমজান মাসেও বানানো হয়। তাই এখন ইফতারিতে ঝাল খাবারের পাশাপাশি রোজাদারদের কাছে এই মিষ্টির বাড়তি কদর থাকে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রমজান মাসে এই মিষ্টির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ভিড় জমান শহরের ঘোষপট্টির মিষ্টির দোকানগুলোয়।
‘মাষকলাইয়ের আমিত্তি’র মূল উপকরণ মাষকলাই। সঙ্গে আতপ চালের গুঁড়া। মাষকলাইয়ের আমিত্তি বানানোর বিষয়ে শহরের মুন্সিবাজার ঘোষপট্টির দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ বলেন, প্রথমে কাঁচা মাষকলাইয়ের ডাল ভালো করে ভিজিয়ে রেখে গুঁড়া করতে হয়। এরপর তাতে পরিমাণমতো চালের গুঁড়া মেশানো হয়। কাঁচা আমিত্তি বানিয়ে তেলে ভাজা হয়। পরে ভাজা আমিত্তিগুলো চিনি দিয়ে বানানো শিরায় কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ বলেন, প্রায় ৮০ বছর আগে থেকে মাষকলাইয়ের আমিত্তি তৈরি করা হচ্ছে। মূলত শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব ও ভাইফোঁটা উৎসবে এই মিষ্টি তৈরি করা হতো। তবে রোজাদারদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে ঘোষপট্টির মিষ্টির দোকানগুলোয় মাষকলাইয়ের আমিত্তি তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে।
শহরের দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, রাজবল্লভ মিষ্টান্ন ভান্ডার, নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ বিভিন্ন দোকানে এই মিষ্টি প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি রমজান মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ কেজি আমিত্তি বিক্রি হয় বলে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানালেন।
দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারে মাষকলাইয়ের আমিত্তি কিনতে এসেছিলেন শহরের মধ্যশেরী মিয়াবাড়ি এলাকার কলেজশিক্ষক সৈয়দ সলিমুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই আমিত্তি অত্যন্ত সুস্বাদু। রমজান মাসে ইফতারে এটি রোজাদারদের কাছে এক বাড়তি আকর্ষণ। তাই প্রায় প্রতিদিনই তাঁরা ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মাষকলাইয়ের আমিত্তি খেয়ে থাকেন।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম বলেন, ইফতারে মাষকলাইয়ের আমিত্তি রোজাদারদের কাছে বেশ প্রিয়। তাই তাঁর বাসা ও সংগঠনের ইফতার মাহফিলে রোজাদারদের জন্য এ মিষ্টি রাখা হয়।