রূপগঞ্জে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তরুণ নিহত, আহত ১৩
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আজ রাত ৯টার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এলাকা এখন শান্ত আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নিহত ওই তরুণের নাম মো. দ্বীন ইসলাম (২৩)। তিনি নাওড়া এলাকার বিল্লাত হোসেনের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন নাওড়া এলাকার জাহিদ মিয়া, মো. সোহেল, শাহিন, জাহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, রাজীব, হোসেন মিয়া, নাজমুল প্রধান, জেসমিন, ইভা, ওয়াসিম ও সাখাওয়াত। আহত ব্যক্তিদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জে জমির ব্যবসা ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তাঁর ভাই রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জেরে প্রায় সময়ই দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের জেরে মোশাররফ হোসেন এলাকাছাড়া হন। গত মঙ্গলবার মোশাররফ তাঁর এক স্বজনের জানাজায় অংশ নিতে এলাকায় আসেন। সে সময় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করলে মোশাররফ এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এর জেরে তিন দিন ধরে নাওড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর বিকেল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন হেলমেট মাথায় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এতে দুই পক্ষের একাধিক লোক গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে দ্বীন ইসলামের মৃত্যু হয়।
এদিকে সংঘর্ষের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হেলমেট মাথায় মোশাররফ হোসেনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে নিরব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পাশেই টেঁটা হাতে সংঘর্ষে অংশ নেন দ্বীন ইসলাম (নীল গেঞ্জি পড়া)। পরে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ বিষয়ে জানতে মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি। মোশাররফের ফুফাতো ভাই ও নিহত দ্বীন ইসলামের চাচা নাজমুল প্রধান অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ করেই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তিন থেকে চার শ লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোশাররফ হোসেন ও নাজমুল প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায়। বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মিজানুর রহমান ও তাঁর সমর্থকেরা শটগান এবং পিস্তলের গুলি ছোড়ে। হামলার সময় পুলিশ নির্বিকার ছিল বলে অভিযোগ নাজমুলের।
তবে সংঘর্ষের সময় এলাকায় ছিলেন না বলে দাবি করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে মোশাররফের লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এতে মোশাররফের এক লোক নিহত হয়েছে। তিনি গ্রামে না থাকায় ঘটনার বিস্তারিত জানেন না।
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় নাওড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ছিলেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। পরে খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা থেকে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে অন্তত ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়েন। পুলিশ নির্বিকার থাকার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।