রাতারগুলের ছড়া শুকিয়ে ও বিষ দিয়ে মাছ শিকার, বন কর্মকর্তা ব্যস্ত কর্মশালায়

সিলেটের রাতারগুলের কৈয়ার খালের পূর্ব অংশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে ছিলছবি: প্রথম আলো

সিলেটের জলা বনখ্যাত রাতারগুলের ছড়া শুকিয়ে ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ঘটনা ঘটছে। গতকাল সোমবার রাতে রাতারগুলের কৈয়ার খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এদিকে নজর নেই দায়িত্বশীলদের। দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন ব্যস্ত কর্মশালা নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে বনের পুন্যাছড়ার পানির বাঁধ কেটে কাপনা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ছড়ার পানি শুকিয়ে ছড়ার মধ্যবর্তী অংশে জাল পেতে মাছ শিকার করা হয়েছে। অন্যদিকে কৈয়ার খালে রাতে বিষ ঢেলে মাছ ধরে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সকালে স্থানীয় ব্যক্তিরা কৈয়ার খালের পূর্ব অংশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে থাকতে দেখেন। পরে বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কর্মশালা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বন বিভাগের উদ্যোগে বন ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে গঠিত সিএমসি কমিটির সভাপতি মাহবুব আলমও কর্মশালায় ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এ এলাকায় প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল।

স্থানীয় ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং রাতারগুল বন ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) কিছু সদস্যদের সহায়তায় অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হয়েছে। এ ছাড়া বনের অভ্যন্তর থেকেও গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, সিএমসির সদস্য শাহ আলমের মাধ্যমে পুন্যাছড়া শুকিয়ে মাছ ধরার জন্য বিক্রি করা হয়েছে। এর ভাগ গেছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সিএমসির সদস্যদের কাছে। এ ব্যাপারে সিএমসির সদস্য শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, কৈয়ার খালে মাছ শিকার বন্ধে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কর্মশালায় ব্যস্ত ছিলেন। খবর নিয়ে জেনেছেন মাছ ধরার বিষয়টি সংরক্ষিত বনের বাইরে ঘটেছে। বনের বাইরের জায়গাটি বন বিভাগ দখলমুক্ত করেছিল এবং সেটি বন বিভাগের জায়গা কি না—এমন প্রশ্নে জবাবে বলেন, সেটি ঠিক সরকারি জায়গা।

সিএমসি কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, মহেষখেড় গ্রামের মসজিদের জন্য প্রতিবছর বনের বাইরের পুন্যাছড়ার মুখে কিছু অংশ মাছ ধরার জন্য বিক্রি করা হয়। ওই অংশে মাছ ধরা হয়েছে। বনের ভেতরে বাঁধ কেটে মাছ ধরার ঘটনা ঘটেনি।

মহেষখেড় জামে মসজিদের মোতোয়ালি আজিজুর রহমান বলেন, তাঁরা মাছ ধরার জন্য কোনো ইজারা দেননি।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি বন বিভাগের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছি।’ পরিবেশ বাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাতারগুল বনকে কিছু সুবিধাবাদী চক্র বন বিভাগের সহায়তায় ভাগবণ্টন করে লুটপাটের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন প্রথম থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছে। কয়েক বছর পরপর সংরক্ষিত বনের পানিতে বিষ ঢেলে মাছ শিকারের ঘটনা ঘটছে। এতে শুধু মাছ নয়, বনের পুরো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর দায় বন বিভাগের এড়ানোর সুযোগ নেই।