খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা পূর্বপরিকল্পিত, দাবি নেতাদের
খুলনা মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় খুলনায় জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এমন একটি ঘটনার বিষয়ে তাঁরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ জন্য শুক্রবার মহানগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলার আশঙ্কার কথা জানত। এরপরও হামলার ঘটনা ঘটায় তাঁরা বিস্মিত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হামলা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব স্থাপনায় হামলা হতে পারে সেসব স্থাপনা রক্ষায় পুলিশ আগে থেকেই সতর্ক ছিল। তবে গতকালের মিছিলটি ওই এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎ মিছিলটি সেখানে যায় এবং কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। সবকিছু এত দ্রুত ও আকস্মিকভাবে হয়েছে, যে কারও কোনো কিছু করার ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। খাবার ও পানি সরবরাহ করেছেন। অনেকে আহতও হয়েছেন। এরপরও আওয়ামী লীগ, তথা ফ্যাসিবাদের কথিত দোসর আখ্যা দিয়ে জনগণ থেকে জাতীয় পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। এ ঘটনার তাঁরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। পাশাপাশি ঢাকা, খুলনাসহ দেশের যেসব জায়গায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, হামলার সঙ্গে ছাত্র-জনতা কোনোক্রমেই জড়িত নয়। বরং যারা আমাদের পার্টি অফিস দখলে নিতে চায়, তাদের উসকানিতে তৃতীয় পক্ষ এ হামলা চালিয়েছে। সুতরাং হামলাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।’
হামলার পর রাতেই থানায় নেতারা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলেও জিডি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড় এলাকায় জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ডাকবাংলা মোড়ে যায়। তারা প্রথমে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরে কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
হামলার ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির খুলনার অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর করেছে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।