কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিককে ছাত্রত্ব থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের একাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। আজকের মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আগামী রোববার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিকেরা।
মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) অর্থ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনি ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী (২০১৭-১৮ বর্ষ)। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা বলে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দাবি, উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বলছেন, তিনি উপাচার্যের বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাছে বক্তব্যের অডিও রেকর্ড ও তথ্যপ্রমাণ আছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক আহমেদ ইউসুফ বলেন, ‘ইকবালকে বহিষ্কারের আগের দিন উপাচার্য মহোদয় আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে নেন। এরপর মনোয়ারকে সাংবাদিক সমিতি থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেন। আমরা সেটি করিনি। আমরা মনোয়ারকে বহিষ্কারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং আইনবহির্ভূত এই বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
এটা অপসাংবাদিকতা। আমি তো উদাহরণ হিসেবে থিওরি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে এভাবে তো বলিনি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাংবাদিক মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম আইনের তোয়াক্কা না করে এবং কোনো বিধি না মেনে ইকবাল মনোয়ারকে বহিষ্কার করেছে। সাংবাদিক সমিতি মনে করে, সংবাদ প্রকাশ কোনো অপরাধ নয়। যে সংবাদের জন্য ইকবালকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে সংবাদের সব তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। প্রশাসন বলেছে, উচ্চপর্যায়ের সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু কারা আছেন এই উচ্চপর্যায়ের সভায় এবং কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ইকবালকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার কিছুই উল্লেখ করেনি প্রশাসন। আমরা আজকের মধ্যে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাই। অন্যথায় রোববার পুরো দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন এ বি এস ফরহাদ, আনোয়ার আজম, গোলাম কিবরিয়া, মঈনুদ্দিন ইরফান, জুবায়ের রহমান, সাঈদ হাসান, শাহীন আলম, নাঈমুর রহমান, চৌধুরী মাসাবীহ, হাসান আল মাহমুদ, মোহাম্মদ রাজীব, তুষার ইমরান, রকিবুল হাসান, হাসিবুল ইসলাম, চাঁদনি আক্তার, জাহিদুল ইসলাম,হেদায়াতুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ, শাহীন ইয়াসার প্রমুখ।
মানববন্ধনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। ওই বক্তব্য উদ্ধৃত করে যায়যায়দিন পত্রিকার অনলাইনে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেন ইকবাল মনোয়ার। ওই প্রতিবেদনে উপাচার্যকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মাপাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মাপাড়ের গরিব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে, তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাধা নয়।’
ওই প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলে গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত ও আংশিক উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় এক অফিস আদেশে ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
ইকবাল মনোয়ার বলেন, ‘আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। উপাচার্যের বক্তব্যের অডিও ও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি তাঁর বক্তব্য হুবহু লিখেছি। রাত আটটায় আমাকে রেজিস্ট্রার ভবনে ডাকা হয়। এরপর সই নিয়ে আমাকে অফিস আদেশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিকতার কারণে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’
উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অপসাংবাদিকতা। আমি তো উদাহরণ হিসেবে থিওরি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে এভাবে তো বলিনি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী ও সদস্যসচিব ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।