উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা

জিয়াউল হক মৃধা
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

বর্তমানে এই আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ চারজন প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির দুই নেতা এবং আবদুস সাত্তার এখনো প্রচারণায় তেমনভাবে নামেননি। আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জয়ের পথ পরিষ্কারের জন্যই সরকার বাকি প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে সরাচ্ছেন বলে স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা মনে করছেন। গত সোমবার আবদুস সাত্তারকে ডাব প্রতীক ও জিয়াউল হককে সিংহ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের প্রতীক পরিবর্তন করে আবদুস সাত্তারকে কলার ছড়া ও জিয়াউল হককে নতুন করে আপেল প্রতীক বরাদ্দ দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

এই উপনির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছায়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন এবং স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম।

দলীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই স্বল্প সময়ের এই নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ওপর কারও কোনো চাপ নেই।
জিয়াউল হক মৃধা

এখন ভোটের মাঠে টিকে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া প্রতীক), আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ (মোটরগাড়ি প্রতীক)। দলীয় মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল প্রতীক)।

আরও পড়ুন

জিয়াউল হক মৃধা তাঁর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে এই আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তাঁর উপলব্ধি হয়েছে, আসন্ন উপনির্বাচনে পরবর্তী সংসদীয় মেয়াদকাল জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য খুব সংক্ষিপ্ত সময়। ভোটারদের যে ওয়াদা ও আশ্বাস দিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন, সংক্ষিপ্ত সময়ে সে ওয়াদা ও আশ্বাস বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। তাই ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচন থেকে তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকে, ‘দলীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই স্বল্প সময়ের এই নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সরকার বা দলের চাপ ছিল কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর কারও কোনো চাপ নেই।’

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ও জেলা জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, জিয়াউল মৃধাকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। তখন সবাই টের পান, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অবশেষে তা–ই হলো। আবদুস সাত্তারের পথ পরিষ্কার হলো। এখানে সবকিছুই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অথচ সাত্তার এখনো মাঠেই নামেননি। রাস্তা পরিষ্কার করেই মাঠে নামবেন আবদুস সাত্তার।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, রাতের আঁধারে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে জিয়াউল হক মৃধাসহ অন্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে সরকার। প্রলোভন দেখিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। স্বকীয়তা হারিয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে নির্বাচন করলে যা হয়, তার উদাহরণ আবদুস সাত্তার। আদর্শকে বঞ্চিত করে দলছুট হয়ে সরকারের ইশারায় কাজ করছেন তিনি।

জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী বলেন, ‘আমার ওপর দলীয় বা প্রশাসনিক কোনো চাপ নেই। তবে জনগণের চাপ আছে। প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি, মাঠে আছি।’

আরও পড়ুন

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ছেলে মাঈনুল ইসলাম তুষার বলেন, ‘দুপুরে ঢাকার বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি সরাইলের পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। বুধবার বিকেলে গ্রামের লোকজনকে নিয়ে সভা করব। বৃহস্পতিবার থেকে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নে সভা করে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামব।’