২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেনকে অপহরণ, স্বাক্ষর জালের অভিযোগে স্ত্রীর মামলা

সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেনকে (বীর প্রতীক) অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল, নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গত বুধবার রাতে ওয়ারেসাত হোসেনের স্ত্রী রওশন হোসেন বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে পূর্বধলা থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় নাদিয়া আক্তার (২৬) নামের স্নাতকোত্তরপড়ুয়া এক তরুণীকে। এ ছাড়া তরুণীর ছোট ভাই পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাইফকে (২০) ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন, সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ (পিএস) হিসেবে পরিচিত ফেরদৌস আলম (৪২), কামরুজজামান উজ্জ্বল (৪২), দুই কলেজশিক্ষক নাদেরুজ্জামান স্বপন (৪২), রতন পাল (৩২), ছাত্রলীগ কর্মী শাহ আলীম (৩২) ও সংসদ সদস্যের গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। তবে আসামিরা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি অসুস্থ থাকায় কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না। এ ছাড়া স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে তাঁর।

মামলার এজাহার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসামিরা বিভিন্ন সময় ওয়ারেসাত হোসেনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন এবং তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর তাঁরা নানাভাবে ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকেন। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফেরদৌস আলম ও কামরুজ্জামান উজ্জ্বলকে সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফিস–আদালতে তাঁর কাজ দেখভালের মৌখিক দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁরা সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেন। অন্য আসামিরা গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ারেসাত হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি কাজলা থেকে একটি গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে সংসদ সদস্যের নিজের বাসা উত্তরায় না নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে গাড়িচালক সংসদ সদস্যের পরিবারকে জানান, ওয়ারেসাত হোসেন বিদেশে চলে গেছেন।

মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামীকে (ওয়ারেসাত হোসেন) জিম্মি করে স্বাক্ষর জাল করে নাদিয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ের একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। এরপর স্বাক্ষর জাল করে তাঁকে (রওশন হোসেন) তালাকের একটি কাগজ ফটোকপি করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে গত ২৭ মার্চ বিকেলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে ঢাকার একটি বাসা থেকে সংসদ সদস্যকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরদিন চিকিৎসার জন্য ওয়ারেসাত হোসেনকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা শেষে ১১ আগস্ট দেশে আনা হয়। এরপর এ ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা করেন সংসদ সদস্য ওয়ারেসাতের স্ত্রী রওশন। মামলায় ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও আটজনকে সাক্ষী করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ওয়ারেসাত হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়ে আসামি ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমাদের নামে করা মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একজন সংসদ সদস্যকে অপহরণ করলে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়ে যেত। এ ছাড়া এজাহারে অপহরণ করে যে সময়ে আটকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কেন যে এমন ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হলো, তা বুঝতে পারছি না।’

মামলার প্রধান আসামি নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘এসব ঘটনা শুনলে খারাপ লাগে। বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানতে চাচ্ছেন। আমার সঙ্গে যদি বিয়ে হয়ে থাকে, তবে আমি আমার স্বামীকে কেন আটকিয়ে রাখব? আর কেনই–বা স্বাক্ষর জাল করতে যাব? আমি এখন এসব বিষয় নিয়ে বিব্রত। সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সখ্য আছে, তা ঠিক। আমার ভাইকে তিনি নেতা বানিয়েছেন। আসা-যাওয়া হতো, কিন্তু অন্য কোনো বিষয় নেই, যা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ভিত্তিহীন।’

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দণ্ডবিধির ৩৪৪, ৩৬৪, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১, ৫০০/৩৪ ধারায় মামলাটি হয়েছে। এতে অপহরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল কাবিননামা ও জাল তালাকনামা তৈরির কথা বলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান ওসি।