অন্যজন ভেবে সমাহিত, ৭ মাস পর বাবার লাশ ফেরত পাচ্ছেন ছেলে
চলতি বছরের ৭ এপ্রিল সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন জেলে হিলটন নাথ। ঘটনার তিন দিন পর মোংলা বাজারে গিয়ে ফিরে আসেননি ব্যবসায়ী মাহে আলম। ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র থেকে অর্ধগলিত একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশটি হিলটন নাথের পরিবারকে হস্তান্তরের পর সমাহিত করা হয়। কিন্তু লাশটি মাহে আলমের বলে স্বজনেরা দাবি করলে বাধে বিপত্তি। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, লাশটি মাহে আলমের।
এ ঘটনার প্রায় সাত মাস পর হিলটন নাথ হিসেবে সমাহিত মাহে আলমের লাশ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের আদালত। গত বুধবার বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক খোকন হোসেন এ আদেশ দেন। মাহে আলম নিখোঁজের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ১৫ দিনের মধ্যে লাশ তুলে বাদী নিহত ব্যক্তির ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন আদালত।
মাহে আলমের ছেলে সুমন রানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় সাত মাস পর নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত বাবার লাশ হস্তান্তরের আদেশ দিয়েছেন। এখন তাঁরা বাবার লাশটি পাওয়ার পর মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সুন্দরবনে অপকর্মে জড়িত একটি মহল তাঁর বাবাকে হত্যা এবং লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত। তিনি তাঁদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মোংলা থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। মৌখিকভাবে আদালতের আদেশের কথা শুনেছি। আদেশের লিখিত কপি পেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত আগস্টের শুরুর দিকে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে জানা যায়, লাশটি মাহে আলমের। বাগেরহাটের মোংলার চিলা এলাকায় গত ১৪ এপ্রিল হিলটন নাথ হিসেবে লাশটি সমাহিত করা হয়।
মাহে আলম মোংলা উপজেলার কেওড়াতলা এলাকার বাসিন্দা। একসময় তাঁর মাছের ঘের ছিল। পাশের চিলা গ্রামে মাছ বিক্রির দোকান ছিল। বয়সের কারণে ব্যবসায় তেমন সক্রিয় ছিলেন না। অন্যদিকে হিলটন নাথ চিলা গ্রামের বাসিন্দা।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, হিলটন নাথ ৭ এপ্রিল সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজলে একটি অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া যায়। হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল খুলনার দাকোপ থানা-পুলিশ লাশটি তাঁর কাছে হস্তান্তর করে। হিলটন নাথ হত্যা ও মাহে আলম নিখোঁজের ঘটনায় দাকোপ ও মোংলা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।
অন্যদিকে নিখোঁজ মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল আমলি আদালত ’গ’ অঞ্চল খুলনা; হিলটন হিসেবে সমাহিত লাশটির ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন। হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথ ও মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যায়, অজ্ঞাতনামা লাশটি মাহে আলমের। এ অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৬ মাস ২৩ দিন পর বুধবার দুপুরে বাগেরহাটের (মোংলা) জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খোকন হোসেন লাশটি তুলে ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। আদালত ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে মাহে আলমের লাশ হস্তান্তর করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।