কক্সবাজার শহরের ব্যস্ততম কলাতলীর মোড়টি চার রাস্তার মিলনস্থল। ২০১০ সালে এই মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ফোয়ারা শোভিত হাঙরের ভাস্কর্য। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের ব্যয় বহন করে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে নির্মাণের পর থেকেই ওই এলাকাটি পরিচিতি পেতে থাকে ডলফিন মোড় হিসেবে। কিন্তু ডলফিন নামটি কীভাবে এল? ওই এলাকার বেশির ভাগ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাঙরের প্রতিকৃতিকেই ভুলবশত ডলফিন বলায় এমন বিপত্তি। রাতারাতি হাঙর ভাস্কর্য মোড় ডলফিন মোড় হয়ে গেছে এই ভুলের কারণেই।
গতকাল রোববার সকাল ১০টায় হাঙর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছিলেন তিন তরুণ। তাঁদের একজনকে প্রশ্ন করে জানা গেল, ভাস্কর্য তিনটিকে তাঁরাও ডলফিনের ভাস্কর্য বলে জানেন। তবে ভুল ধরিয়ে দিতে তিনজনই স্বীকার করলেন, তাঁদের বোঝার ভুল হয়েছে। ডলফিন নয়, হাঙরেরই ভাস্কর্য এগুলো।
হাঙর ভাস্কর্যের পূর্ব পাশে একটি রেস্তোরাঁর নাম ‘ডলফিন রেস্তোরাঁ অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’। সাইনবোর্ডের ঠিকানায় লেখা, ‘কলাতলী ডলফিন মোড়, কক্সবাজার’। দোকানের ব্যবস্থাপক মো. সাব্বির বলেন, তিন বছর আগে রেস্তোরাঁটি চালু হয়। ‘ডলফিন মোড়ে’ এটির অবস্থান হওয়ায় রেস্তোরাঁর নামও রাখা হয় ডলফিন রেস্তোরাঁ।
হাঙর ভাস্কর্যের পশ্চিম পাশেই ট্রাফিক পুলিশের শাখা কার্যালয়। কয়েকজন পুলিশ মোড়ে দাঁড়িয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তাঁদের কার্যালয়টি কোন এলাকায় পড়েছে, জানতে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ডলফিন মোড়ের নাম বলেন। একই কথা বলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দীন চৌধুরী। কিন্তু হাঙর ভাস্কর্যের মোড়কে কেন ডলফিন মোড় বলা হচ্ছে জানতে চাইলে জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘সবাই এটিকে ডলফিন মোড় বলে চেনেন-জানেন। প্রতিদিন এই মোড়ে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটলেও ভাস্কর্য যে হাঙরের, তা খেয়াল করেন না। অনেকে হাঙর আর ডলফিনের পার্থক্য জানেন না।’
দীর্ঘ তিন দশক ধরে শহরের কলাতলী এলাকায় থাকেন ব্যবসায়ী মকিম খান। এক যুগ আগে কলাতলীতে তিনি বহুতল ভবনের একটি হোটেলও নির্মাণ করেন। এখন আশপাশে শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। মুকিম খান কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, মানুষের মুখে মুখে হাঙর ভাস্কর্যটি ডলফিন মোড়ে পরিণত হয়ে গেছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণে আসা ৯০ শতাংশ পর্যটক বাস থেকে নামেন কলাতলীতে। বাসের চালক, হেলপার এবং স্থানীয় ইজিবাইকের চালকদের মুখে মুখে এলাকাটি ডলফিন মোড় হয়ে গেছে।
হাঙর রক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার তাগিদ থেকেই হাঙরের ভাস্কর্য নির্মিত হয় কলাতলীর মোড়ে। জেলার পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের মতে, কক্সবাজার সমুদ্রেও নানা প্রজাতির হাঙরের বিচরণ থাকলেও গত ৫০ বছরে কেউ আক্রমণের শিকার হননি। তবে হাঙরের ভাস্কর্য অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করছে। অনেক বিদেশি পর্যটক ভাবেন, সৈকতে হাঙর রয়েছে।
শহরের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, শহরে ঢোকার প্রবেশমুখ কলাতলীতে হাঙরের ভাস্কর্য দেখে অনেক পর্যটক ভুল বোঝেন। কারও কারও ধারণা হয়, সৈকতে হাঙর রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। তাই হাঙর ভাস্কর্য খুব যে চিন্তাভাবনা করে স্থাপন করা হয়েছে, তা তিনি মনে করেন না। ভাস্কর্য নিয়ে এই বিভ্রান্তিও দূর করতে হবে।