রাজশাহী সিটি নির্বাচন
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগর, অন্য প্রার্থীরা শুরুই করেননি
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে গতকাল শুক্রবার দুপুরে। এই সময়ের আগেই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল। গতকাল সন্ধ্যার মধ্যেই পুরো নগর ছেয়ে যায় এই প্রার্থীর পোস্টারে। আজ শনিবার তা আরও বেড়েছে।
নৌকা প্রার্থীর পোস্টারের বিপরীতে অন্য তিন মেয়র প্রার্থী বলতে গেলে প্রচারই শুরু করেননি। তাঁদের কোনো ধরনের পোস্টার চোখে পড়েনি। ওই তিন প্রার্থী বলছেন, প্রথম দিন যে পরিমাণ পোস্টার লাগিয়েছেন একজন প্রার্থী, তাতে তাঁদের পোস্টার দৃশ্যমান করতে গেলে দ্বিগুণ পোস্টার লাগাতে হবে। তবে তাঁরা ধীরে ধীরে প্রচার বাড়াবেন। পোস্টারের খরচের ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী থাকবেন তাঁরা।
এর আগে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রথমে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। কোনো প্রার্থী একাই কোনো নির্দিষ্ট প্রতীক চাইলে তাঁকে সেটি দেওয়া হয়। তবে কোনো প্রতীক একাধিক প্রার্থী চাইলে লটারি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রথমে আওয়ামী লীগ মনোনীত এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলমকে ‘হাতপাখা’, জাকের পার্টির প্রার্থী এ কে এম আনোয়ার হোসেনকে ‘গোলাপ ফুল’ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনকে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানেই প্রতীক বরাদ্দের আগে নৌকা–সমর্থিত প্রার্থীর পোস্টার সাঁটানো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। তারপরও বলব, আপনারা (সাংবাদিকেরা) বাইরে গিয়ে দেখেন, প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এটা আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে বলেছি।’
আজ রাজশাহী নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের সব রাস্তা, স্থাপনা, বিদ্যুতের খুঁটি, লাইটের খুঁটিতে ঝুলছে নৌকা প্রার্থীর পোস্টার। এ ছাড়া সড়ক বিভাজন, বিভিন্ন গোল চত্বরেও পোস্টারের ছড়াছড়ি রয়েছে। কোথাও কোথাও দড়িতে বেঁধে পোস্টারগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পোস্টার এক পাশে দড়ি ছিঁড়ে পড়েও গেছে।
নগরের কাজলা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে নির্বাচনী পোস্টার নিয়েই কয়েকজন আলোচনা করছিলেন। আলোচনায় উঠে এল আওয়ামী লীগ–সমর্থিত নৌকা প্রার্থীর পোস্টারের প্রসঙ্গ। তাঁরা বলছিলেন, এই পোস্টারই বলে দিচ্ছে কে মেয়র হবেন। কামরুল হোসেন নামের একজন বলেন, বিরোধী দল বিএনপি থাকলে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আমেজ থাকত। বিএনপির প্রার্থী নেই, নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। ভোট হবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে।
পোস্টারের মতো মাইকিংয়েও এগিয়ে আছেন নৌকা প্রার্থী। দলটির রাজশাহী মহানগরের ৩৭টি সাংগঠনিক কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ৩০টি ওয়ার্ডে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও জাকের পার্টির প্রার্থী এখনো পোস্টার লাগাননি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্বল্প পরিসরে মাইকে প্রচারণা চালালেও জাকের পার্টির প্রার্থীর প্রচারণা চোখে পড়েনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টার সময় হলেই চলে আসবে। পোস্টারগুলো ছাপাতে দেওয়া হয়েছে, চলে আসবে। হাতপাখার পোস্টার যতটুকু সম্ভব লাগাবেন তাঁরা। একটা পোস্টারে খরচও অনেক পড়ে। তাঁরা বিকল্প প্রচারণার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রচার ডিজিটাল পদ্ধতিতে করবেন।
আজ বিকেল থেকে লিফলেট বিতরণ করবেন বলে জানান জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা পোস্টার লাগাব। দেখলাম যে একজন প্রার্থীর পোস্টারে রাজশাহী ছেয়ে গেছে। ওর মধ্যে আমাদেরটা তো গুনেই পাওয়া যাবে না। আমাদের টার্গেটটা হচ্ছে, খরচ যত কমিয়ে পোস্টার করা যায়। কারণ, মানুষ জানে কোন কোন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন।’
জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার বলেন, প্রচার–প্রচারণা গতকাল থেকেই চলছে। আজও লিফলেট দেওয়া হবে। তবে এখনো মাইকিং করা হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গণসংযোগ জোরেশোরে করা হবে। রাজশাহীতে আশা করা যাচ্ছে, সবার জন্য সমান প্রচারণার সুযোগ আছে। ধীরে ধীরে প্রচার–প্রচারণা বাড়াবেন তিনি।
নৌকা–সমর্থিত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ফোন করা হলে তিনি কল ধরেননি। তবে লিটনের নির্বাচনী প্রচার কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল–সমর্থিত পোস্টার তাঁরা লাগিয়েছেন। প্রথম দিন প্রতীক পাওয়ার পরই প্রচার–প্রচারণার সরঞ্জাম ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড, ৩০টি প্রশাসনিক ওয়ার্ড ও ৫টি থানা এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি মেয়রের শুভাকাঙ্ক্ষীরা ব্যক্তি উদ্যোগেও পোস্টার লাগিয়েছেন। এতেই পোস্টার-ফেস্টুনের বিশাল সমারোহ হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকেই ৩০টি ওয়ার্ডে একটি করে প্রচার মাইক দিয়েছেন।
প্রতীক বরাদ্দের আগে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে আহসানুল হক বলেন, কিছু অতি উৎসাহী মানুষ হয়তো কিছু পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এটা তাঁদের জানার বাইরে ছিল। তাঁদের সিদ্ধান্ত ছিল, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ামাত্রই পোস্টার লাগানো হবে।