স্কুলছাত্রী মুক্তির মাথা ও ঘাড়ে ৫টি কোপ দেন বখাটে কাওছার

মুক্তি বর্মণ
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার বারহাট্টায় নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের (১৫) মাথা ও ঘাড়ে ধারালো দা দিয়ে পরপর পাঁচটি কোপ দেন বখাটে কাওছার। প্রথম দুটি কোপ ছাতা দিয়ে আটকালেও পরের তিনটি কোপ ফেরাতে পারেনি মুক্তি। সর্বশেষ ঘাড়ে কোপ দেওয়ার পর মুক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচ স্কুলশিক্ষার্থী আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠীরা বলে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর মুক্তিসহ তারা হেঁটে নদীর পাড় এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় সেখানে একটি রেইনট্রিগাছের নিচে কাওছার দা ও কাঁচা আম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় কাওছার সেখানকার এক ছাত্রীকে আম খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। ওই ছাত্রী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হাঁটতে শুরু করে। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাওছার আমগুলো নদীতে ছুড়ে ফেলে মুক্তিকে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। এ সময় সঙ্গে থাকা প্রায় আট শিক্ষার্থী মুক্তিকে রক্ষায় এগিয়ে এলে কাওছার দা উঁচু করে তাদের ভয় দেখান। পরে চিৎকার শুনে নদীর তীরে কাজ করতে থাকা মো. মোস্তফা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি এগিয়ে এলে কাওছার দা ফেলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান।

কাওছারের প্রতিবেশী জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাওছার এলাকায় বখাটে ছেলে হিসেবে পরিচিত। সে বিভিন্ন সময় এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিল। এরপর কিছুদিন একজন গেরস্ত বাড়িতে কাজ করত। আমরা চাই এই বখাটেকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন

গতকাল বেলা তিনটার দিকে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে উপজেলার ছালিপুরা এলাকায় মুক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেন মো. কাওছার মিয়া (১৮)। বিকেল পাঁচটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ওই স্কুলছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মুক্তি উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে এবং প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর অভিযুক্ত কাওছার মিয়া একই গ্রামের মো. শামসু মিয়ার ছেলে।

আজ সকাল আটটার দিকে উপজেলার প্রেমনগর গ্রামে নিহত মুক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা প্রণবা বর্মণ ও বাবা নিখিল বর্মণ অসাড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। একজন গ্রাম্য চিকিৎসক তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

নিহতের স্বজনদের আহাজারি। আজ বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

মুক্তির বড় বোন দীপা বর্মণ স্থানীয় একটি কলেজে পড়েন। তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত কাওছার বেশ কয়েকবার তাঁর বোনকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগে কাওসার আমার চাচাতো ভাই জয়কে মারধর করে। পরে মুক্তি ও আমার ছোট বোন ইতি প্রতিবাদ করেছিল। পরে কাওছারের পরিবারের কাছে বিচার দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে কাওছার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমরা তো আর আমাদের বোনকে ফিরে পাব না। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বখাটে কাওছারের ফাঁসি চাই।’

আরও পড়ুন

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই কাওছার পলাতক। আজ সকাল নয়টার দিকে কাওসারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল থেকে কাওসারের বাড়িতে কেউ নেই। কাওছারের অন্য দুই ভাই কাজ করে। আর একমাত্র বোন বিয়ের পর থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। বাবা শামসু মিয়াও অন্যের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করেন।

কাওছারের শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রতিবেশী আলম মিয়া বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬৫ বছর। এই বয়সে এলাকায় এ রকম ঘটনা আগে আর কখনো ঘটেছে বলে শুনিনি। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় একটি মেয়েকে এমন নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আমরা সবাই কাওসারের শাস্তি দাবি করি।’

মুক্তি হত্যাকাণ্ডে এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনায় আজ ভোরে অভিযুক্ত কাওছারের বোনের স্বামী মাসুদ মিয়াকে (৩৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যায় ব্যবহৃত দা আমরা উদ্ধার করেছি। অভিযুক্ত কাওছারকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।’