‘দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির চট্টগ্রাম জেলার গণসমাবেশে বক্তব্য কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। আজ সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন এলাকায় গণসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। সুতরাং দ্রুততার সঙ্গে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনারা কার্যক্রম শুরু করুন।’

সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা এ গণসমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা সব প্রত্যাশা করি না। এটি বিপ্লবী সরকার নয়। আবার নির্বাচিত সরকারও নয়; সুতরাং সব নয়, অল্প কিছু কাজ এ সরকারকে করে যেতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। এটি এ সরকারের অন্যতম ম্যান্ডেট। এ জন্য হঠাৎ নির্বাচন নয়। নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। এরপর নির্বাচন দিন।’

নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে ১৫ দিন যথেষ্ট বলে মনে করেন রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘একটি সভায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ও একজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, কমিশনকে তিন মাস সময় কেন দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনই যথেষ্ট।’

সংস্কারের বিষয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এখন নতুন তত্ত্ব আনা হচ্ছে। সেটি হলো সংস্কার। কমিশন গঠন হয়েছে ১১টি। তারা নিজেরা কী কী যেন করছে। করে বলছে, জানুয়ারির মধ্যে তারা একটা প্রস্তাব দেবে। প্রস্তাবের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা নয়, কর্মশালা হবে। আমরা সেদিন (৫ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করুন।’

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘তারা বাংলাদেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করল। এক যুগের বেশি সময় ধরে তারা বাংলাদেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করল। ভোটব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিল। ধ্বংস করে দিয়ে তারা একটা নতুন তত্ত্ব দেশের সামনে হাজির করেছিল। সেটি হলো উন্নয়ন।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা নিই না। কদিন আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। এ জন্য পরিণতি ভোগ করেছে। এখন যারা ক্ষমতায় আছে বা ভবিষ্যতে আসবে, এই কথাগুলো মনে রাখতে হবে। না হলে তাদের পরিণতিও একই হবে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন হয়নি। সেটা আমাদের করতে হবে।’

বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় গরু-ছাগল চুরি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে প্রিন্স বলেন, ‘সাড়ে তিন মাস হলো, জনজীবনে শান্তি আনতে পারলেন না। জিনিসপত্রের দামও সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারলেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ ছিল এসব ব্যবস্থা বদল করবে। আমরা দেখতে পারছি, সেটি হলো না। হওয়ার ক্ষেত্রে আলামতও দেখছি না।’

দখলদারের প্রসঙ্গ টেনে প্রিন্স বলেন, দেশে যেসব দুর্বৃত্ত গড়ে উঠেছে, তাদের দল নেই। এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার হয়েছে। সচিবালয়ে আগে একদল আরেক দলের তাফালিংয়ে অস্থির ছিল। সুতরাং এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার নয়, এক চাঁদাবাজের পরিবর্তে আরেক চাঁদাবাজ নয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া। বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।