সুনামগঞ্জ-১ আসনে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন সম্পর্কে ১৫ বছর আগের কিছু তথ্য সামনে এনেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা ওরফে মুকুট। তিনি বলেছেন, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু এর আগেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন (নমিনেশন) এনেছিলেন তিনি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনজিত সরকারের সমর্থনে আয়োজিত এক নির্বাচনী সভায় এসব কথা বলেন নুরুল হুদা। জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজারে এই সমাবেশ হয়। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল হুদা সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মোয়াজ্জেম হোসেন এবার নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের কিছু নেতা-কর্মীও তাঁর সঙ্গে আছেন।
নুরুল হুদা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার ১৫ দিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর বাসায় আসেন। নুরুল হুদা তখন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেদিন মোয়াজ্জেম তাঁকে সালাম করে বলেছিলেন, ‘ভাইসাব, আমি উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচন করব, আমাকে ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের একটা সদস্যপদ দেন।’ পরে তিনি দলের প্যাডে এটা লিখে দেন। রতন এরপর তখনকার জেলা সভাপতি মতিউর রহমানের কাছে যান। মতিউর রহমান তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন।
নুরুল হুদা বলেন, ‘এর দুই দিন পর রতন সুনামগঞ্জে এসে বলেন, “ভাইসাব, আপনে তো পেছনে পড়ে গেছেন।” কীভাবে পেছনে পড়লাম, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে বলল, “দুই কোটি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন নিয়ে এসেছি।” আমি তখন খোঁজ নিলাম, আসলে ঘটনা সত্য, না মিথ্যা। ওনার বন্ধু কানাডার নাগরিক, ওনাকে একটা গাড়ি উপহার দিয়ে উনি নমিনেশন নিয়ে এসেছেন।’
নুরুল হুদা বলেন, তখন (২০০৮ সালে) এই আসনে মনোনয়নের জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হকের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছিল। নেত্রী এতে বিরক্ত। এর মধ্যে সারোয়ার সাহেবকে (কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) নেত্রী বললেন, ‘দেখো কাউকে পাওয়া যায় কি না?’ তখন সারোয়ার সাহেব বললেন, ‘নেত্রী, একজন ইঞ্জিনিয়ারকে আমরা পেয়েছি। ওই এলাকার সবচেয়ে যোগ্য একজন ইঞ্জিনিয়ার।’ নুরুল হুদা সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জানেন, উনি (মোয়াজ্জেম হোসেন) কোন পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ার। উনি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।’
ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুল হুদা আরও বলেন, এরপর মোয়াজ্জেম হোসেন নির্বাচন করার টাকা নেই বলে নুরুল হুদার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নিয়ে নির্বাচনী এলাকা তাহিরপুরে যান। সেখানে গিয়ে এর কাছ থেকে এক লাখ, ওর কাছ থেকে দুই লাখ, ওর কাছ থেকে পাঁচ লাখ, এভাবে হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা তিনি কালেকশন করেছেন। তারপর নির্বাচন করেছেন।
নির্বাচিত হওয়ার পরই মোয়াজ্জেম হোসেন নিজের ভাগ্য পরিবর্তন শুরু করে দেন উল্লেখ করে নুরুল হুদা আরও বলেন, এখন ধর্মপাশায় তাঁর তিনটা বাড়ি। সব জায়গায় মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি আছে। ঢাকায় বিরাট অট্টলিকা আছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে এক স্ত্রীর নামে, আরেকটা আরেক স্ত্রীর নামে। কানাডাতে বড় স্ত্রীর নামে একটা বাড়ি আছে।
নুরুল হুদা সভায় নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘আপনার পকেটের টাকা, আমার পকেটের টাকা নিয়ে উনি আপনাদের ডেভেলপমেন্ট না করে, উন্নয়ন না করে নিজের উন্নয়ন করেছেন, নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এবং ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনে পরিণত হয়েছেন। আজ ওনার টাকার কোনো অভাব নেই।’ নুরুল হুদা অভিযোগ করেন, আজ মোয়াজ্জেম হোসেন বহু মানুষকে টাকা দিয়ে কিনছেন। জামালগঞ্জেও এই টাকা ছড়াচ্ছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার নওধার গ্রামে। তিনি ২০০৮ সালে প্রথম এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নুরুল হুদার বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে মোয়াজ্জেম হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে এবার আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আছেন তিনজন। রনজিত সরকার ও মোয়াজ্জেম হোসেন ছাড়া স্বতন্ত্র অন্যজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ।