রাখাইনে আবারও রাতভর গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপ, এপারে আতঙ্ক
বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু হয়েছে। চলমান সংঘাত তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয় এবং তা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে। এরপর গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ শোনা যায়।
সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সীমান্তচৌকি দখল-পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)। আরাকান আর্মির দখলে থাকা সীমান্তচৌকি পুনরুদ্ধারে হেলিকপ্টারে করে মর্টার শেল ও গুলি ছোড়ে সরকারি বাহিনী। শক্তি ও উপস্থিতি জানান দিতে গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয় আরাকান আর্মিও।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে রাখাইনের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, পেরাপ্রুসহ কয়েকটি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। মর্টার শেলের বিকট শব্দে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম করে দেয়। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ শাহ জালাল জানান, তাঁর এলাকার মানুষজনও রাতভর ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফনদের তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এখন সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যের বলি বাজার, নাকপুরা ও কুমিরখালী, পেরাংপ্রুতে (টেকনাফের বিপরীতে) দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির একাধিক সীমান্তচৌকি রয়েছে। মংডু শহরের আশপাশে রয়েছে কাওয়ারবিল বিজিপি হেডকোয়ার্টারের আওতাধীন ১ ও ৫ নম্বর সেক্টর। এক মাসের চলমান যুদ্ধে আরাকান আর্মি নাইক্ষ্যংছড়ির বিপরীতে রাখাইন রাজ্যে তুমব্রু রাইট ও লেফটে অবস্থিত তিনটি বিজিপি চৌকি দখলে নেয়। অন্যদিকে মংডুর দক্ষিণে রাচিডং ও বুচিডং এলাকার কয়েকটি চৌকি দখলের খবর রয়েছে। এখন মধ্যভাগে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, তিন দিন বন্ধ থাকার পর ওপারে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় এপারের লোকজনের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সীমান্তচৌকি দখল এবং পুনরুদ্ধারের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, মর্টার শেলের বিস্ফোরণে মাটি কেটে উঠছে। এতে হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও টেকনাফ সীমান্তের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, নতুন করে কিছু এলাকায় গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাতের গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণে ঘটনায় আতঙ্কে মানুষ। লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি-উখিয়া সীমান্ত শান্ত
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত ওপার শান্ত রয়েছে। সেখানে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, এখন যেখানে যুদ্ধ চলছে, তা ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এ কারণে গুলির শব্দ এপারে আসছে না। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন ঘুমধুমের সীমান্তঘেঁষা পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এর আগে বিদ্যালয়গুলো টানা ২৩ দিন বন্ধ ছিল।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আরাকান আর্মি মংডু শহরের তিন দিক ঘিরে রেখেছে। এখন তারা মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও অবস্থান ধরে রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। ফলে চলমান সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে। ভয়ে পালংখালীর হাজারো মানুষ সীমান্তঘেঁষা চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জমিতে (ঘেরে) যেতে পারছেন না।
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে বিজিবি।