সদরঘাটে নোঙরের সময় লঞ্চের ধাক্কায় রশি ছিঁড়ে দুজন আহত

সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে আহত এমভি আল সাফিন সাত্তার খান লঞ্চের কেরানি সুমন মিয়া। শনিবার দুপুরে লঞ্চের কেবিনেছবি: প্রথম আলো

ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে লঞ্চ নোঙর করার সময় একটি লঞ্চের ধাক্কায় আরেকটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে এক যাত্রীসহ দুজন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল পৌনে আটটার দিকে সদরঘাট টার্মিনালের ৩ নম্বর পন্টুনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন এমভি আল সাফিন সাত্তার খান লঞ্চের কেরানি সুমন মিয়া (৪২) ও লঞ্চের যাত্রী সুমন খান (৩৫)। তাঁদের মধ্যে কেরানি মাথায় ও যাত্রী বুকে গুরুতর আঘাত পান। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠান। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে সদরঘাটে বাঁধা একটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, সদরঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনে পটুয়াখালীগামী এমভি আল সাফিন সাত্তার খান নামের একটি লঞ্চ রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সকাল পৌনে আটটার দিকে এমভি প্রিন্স রায়হান-১ নামের আরেকটি লঞ্চ এমভি সাফিন সাত্তার খান লঞ্চকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে পন্টুনে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন পন্টুনের সঙ্গে বাঁধা আল সাফিন লঞ্চের রশি ছিঁড়ে লঞ্চের প্রবেশমুখে অপেক্ষমাণ কেরানি সুমন মিয়া ও যাত্রী সুমন খানকে আঘাত করে। এতে সুমন মিয়া মাথায় ও সুমন খান বুকে গুরুতর আঘাত পান।

প্রত্যক্ষদর্শী লঞ্চের যাত্রী আকাশ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সকাল পৌনে আটটার দিকে টার্মিনালের ৩ নম্বর পন্টুনে এমভি প্রিন্স রায়হান-১ লঞ্চ নোঙর করার সময় সজোরে আল সাফিন লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে পন্টুনে বাঁধা আল সাফিন লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘গত ঈদে রশি ছিঁড়ে ৫ জন মারা গেল। আজ আবার এই ঘটনা ঘটল। এখন দেখছি, সদরঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

আরও পড়ুন

এমভি আল সাফিন লঞ্চের পরিচালক হানিফ মিয়া বলেন, এমভি প্রিন্স রায়হান-১ লঞ্চ নোঙর করার সময় তাঁদের লঞ্চটিকে জোরে ধাক্কা দিলে পন্টুনে বাঁধা রশি ছিঁড়ে যায়। এতে তাঁদের কেরানি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এ ছাড়া লঞ্চের প্রবেশমুখে দাঁড়ানো এক যাত্রী বুকে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তবে এমভি প্রিন্স রায়হান-১ লঞ্চের ব্যবস্থাপক নজরুল ব্যাপারী তাঁদের লঞ্চের ধাক্কায় রশি ছিঁড়েনি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে আমাদের লঞ্চটি নোঙর করছিলাম। আমাদের লঞ্চের ধাক্কায় এমভি আল সাফিন সাত্তার খান লঞ্চের রশি ছিঁড়েনি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

আহত যাত্রী সুমন খান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল পৌনে আটটার দিকে দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চে ওঠার সময় আল সাফিন লঞ্চের রশি ছিঁড়ে তাঁকে ও লঞ্চের কেরানিকে আঘাত করে। রশিটি ছিঁড়ে সরাসরি তাঁর বুকে লাগে। তখন তিনি লঞ্চে পড়ে যান। এরপর আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই দাবি জানান তিনি।

নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হাসান বলেন, লঞ্চের রশি ছিঁড়ে আহত হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কোনো অভিযোগ পাননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি বলেন, নৌপথের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও ছাদে যাত্রী বহন করা রোধে কাজ করছে নৌ পুলিশ। নদী ও পন্টুনে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ও অপরাধ না হয়, সে ব্যাপারে নৌ পুলিশ সতর্ক আছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। আহত দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কী কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে দোষী লঞ্চের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন