বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ

বিক্ষোভের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর পদত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা উল্লাস ও মিছিল করেনছবি: সাইয়ান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে পদত্যাগপত্র দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইউম ও প্রক্টরিয়াল বডির সাত সদস্য।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম দুপুর একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য এবং প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সাত সদস্য আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে একদল শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর আবদুল কাইউমের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছিল। এই দাবি ওঠার পর উপাচার্যের স্বপদে বহাল রাখার দাবিতে আরেক দল শিক্ষার্থী আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করেন। একইভাবে পদত্যাগের দাবিতেও আজ মঙ্গলবার কর্মসূচি আহ্বান করে অপর পক্ষ। দুই দল শিক্ষার্থীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে আজ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ছিল উত্তেজনা। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি হয়।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যেই বেলা ১১টার কিছু পর আকস্মিক প্রক্টর আবদুল কাইউম তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির বাকি সাতজন সদস্যও পদত্যাগপত্র জমা দেন রেজিস্ট্রারের কাছে। প্রক্টরের পদত্যাগের খবর প্রকাশের পরপরই ক্যাম্পাসে গুঞ্জন শুরু হয় উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়াও পদত্যাগ করছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া শিক্ষকদের সঙ্গে একটি সভা করেন। সভায় তিনি বক্তব্যে শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের কাজ করতে গিয়ে ত্রুটিবিচ্যুতি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানান। উপাচার্যের এই বক্তব্যের পর তিনি পদত্যাগ করছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এ বিষয়ে পদত্যাগকারী উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর আবদুল কাইউমকে ফোন করা হলেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, বর্তমান উপাচার্য ও প্রক্টর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে গেলেও তাঁরা বাধা দেননি; বরং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করতে সহায়তা করেছেন। ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও গুলিবর্ষণে অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হন। এই হামলা ঠেকাতে তাঁরা নির্লিপ্ত ছিলেন।

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। গত বছরের ৮ নভেম্বর তৎকালীন উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিনের চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর বদরুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন শুরু করেন। চলতি বছরের ৪ মার্চ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাইউম ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পান।