পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী
অজানা রোগে মরছে তরমুজগাছ
এক সপ্তাহ ধরে খেতের বেশ কিছু গাছ নিস্তেজ হয়ে মরে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না।
মাসুম সিকদার চলতি মৌসুমে তিন হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। বীজ, সার, সেচ ও শ্রমিক খরচ বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। তাঁর খেতে ২০ হাজারের মতো তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাঢ় সবুজ লতায় মোড়ানো কোনো কোনো গাছে ফল এসেছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে খেতের বেশ কিছু গাছ নিস্তেজ হয়ে মরে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাসুম সিকদার।
মাসুম সিকদারের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে। তিনি ইউনিয়নের কাউখালী চরে তরমুজের চাষ করেছেন। মাসুম সিকদার বলেন, তাঁর প্রতি হেক্টর খেত থেকে অন্তত ৩৫ মেট্রিক টন তরমুজের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজারমূল্য হবে কমপক্ষে এক কোটি টাকা। কিন্তু যেভাবে গাছ মরে যাচ্ছে, তাতে উল্টো লোকসানের শঙ্কায় আছেন তিনি। বিষয়টি তিনি কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
এদিকে উপজেলার আরেক তরমুজচাষি মনির হাওলাদার কাউখালী চরে সাত হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। তাঁর খেতে ৩০ হাজারের মতো তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। তাঁর খেতেও বেশ কিছু গাছ নিস্তেজ হয়ে মরে যাচ্ছে। কী রোগে গাছ নিস্তেজ হয়ে মরে যাচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এই চাষি। বিষয়টি তিনি কৃষি বিভাগকে জানিয়েছেন। খেতের গাছ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা না নিতে পারলে তাঁর মতো কৃষকেরা লোকসানে পড়বেন বলে জানান মনির হাওলাদার।
দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান এলাকা পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। গত রোববার সকালে সরেজমিনে রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী ও চরইমারশন চরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে খেতের ফাঁকে ফাঁকে ফল ধরা তরমুজগাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। চাষিরা কেউ ওষুধ ছিটাচ্ছেন। আবার কেউ মরা গাছ উপড়ে ফেলে দিচ্ছেন। ইউনুস সিকদার নামের এক তরমুজচাষি বলেন, মরা গাছ থেকে পাশের আরেকটি গাছ রোগে আক্রান্ত হবে—এই ভয়ে আক্রান্ত গাছ খেত থেকে উঠিয়ে ফেলে দিচ্ছেন।
চরইমারশন এলাকার আহোসেন নামে এক চাষি বলেন, ‘তরমুজগাছের শিকড় এবং পাতা শুকিয়ে মরছে। কারণ যে কী বুঝি না। পানি দিচ্ছি, ওষুধ ছিটাই, কোনোটাতেই কোনো কাজ হয় না। ফল ধরেছে, এমন গাছও মরে যাচ্ছে। ধার আইন্যা তরমুজ দিছি। গাছ মইরা গেলে তো আমরা মাঠে মরব।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাষিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলার কাউখালী ও চরইমারশন—এই দুটি চরে রোববার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এই দুটি চরে মোট এক হাজার হেক্টর খেতের মধ্যে আনুমানিক ১০০ হেক্টর খেত ক্ষতির মুখে পড়েছে। সঠিক কারণ নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
গত বছর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮ হাজার ২৬২ হেক্টর খেতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন তরমুজ। যা বিক্রি করে কৃষকদের আয় হয় কমপক্ষে ৫৭৮ কোটি টাকা। এলাকার উপযুক্ত মাটি, উৎপাদন খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এই উপজেলার কৃষকেরা তরমুজ চাষে বেশি ঝুঁকছেন।