সুনামগঞ্জে রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তি, তবে নতুন করে বৃষ্টির শঙ্কা

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার ফিরিজপুর থেকে আজ সকালে তোলাছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে গতকাল বুধবার রাতে ভারী বৃষ্টি হবে, এমনটিই পূর্বাভাস ছিল। তাই বন্যার পানি বাড়ার শঙ্কায় আতঙ্কিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মনে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আজ বৃহস্পতিবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় শিগগিরই সুখবর মিলছে না। যেকোনো সময় পানি আবার বাড়তে পারে।

জেলার নিচু এলাকার কোথাও কোথাও পানি সামান্য বাড়লেও এই হার সার্বিকভাবে অপরিবর্তিত আছে। জেলার ছাতক, সদর, দোয়ারাবাজারে এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখা গেছে। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এমনটা আশা করছেন স্থানীয় লোকজন।

জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগরও জামালগঞ্জ উপজেলায় কিছুটা পানি বেড়েছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে বেশি। পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা সামলাতে হয় এই দুই উপজেলাকে। ছাতক এক সপ্তাহ ধরে বন্যাকবলিত। উপজেলাটির সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের কিছু স্থানে বন্যার পানি উঠলেও যান চলাচল স্বাভাবিক। তবে জেলার ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়ক প্লাবিত হওয়ায় এসব সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে এক সপ্তাহ ধরে।

জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছে বলে জানান একাধিক ভুক্তভোগী। জেলায় মাত্র ৭০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত বলে জেলা প্রশাসন দাবি করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলেছেন, পুরো জেলাই বন্যাকবলিত। সেই হিসাবে লাখো মানুষ পানিবন্দী। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগরও জামালগঞ্জ উপজেলায় কিছুটা পানি বেড়েছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে বেশি। পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা সামলাতে হয় এই দুই উপজেলাকে। ছাতক এক সপ্তাহ ধরে বন্যাকবলিত। উপজেলাটির সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ শহরের সর্বত্র এখনো পানি দেখা যাচ্ছে। মানুষের বসতঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। যাঁদের বসতঘরে পানি ঢুকেছে, তাঁরা আছেন বেশি কষ্টে। অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উঠেছেন হোটেলে। কেউ কেউ আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। শহরের ডিএস রোড, ষোলঘর এলাকার সড়কে সামান্য পানি কমেছে।

শহরের নতুনপাড়া, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, ফিরোজপুর, উকিলপাড়া, মুক্তারপাড়া, হাজীপাড়া, আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, কালীপুর সমবায় সুপারমার্কেট, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার এলাকায়ও বন্যার পানি আছে। এসব এলাকায় অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, জেলা প্রশাসক

শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পানি স্থির হয়ে আছে। কমছেও না, বাড়ছেও না। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ অনেকটা স্বস্তি পেয়েছে।’

সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহসান জামিল জানান, তাঁর এলাকায় অনেক মানুষের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি আছে। তাঁদের এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসায় (আশ্রয়কেন্দ্রে) নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি গতকাল সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি ১২৯ সেন্টিমিটার, দিরাইয়ে ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা) বৃষ্টি হয় ৫৫ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও গতকাল কম বৃষ্টি হয়েছে।

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক। সড়কের সদর উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পাশ থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণেই সমস্যা বেশি হয়। ঢল নামলেই পানি বাড়ে। গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়নি, উজানের ঢলও নেমেছে কম। তাই সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে কমেছে। তবে আজও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই পানি আবার বাড়তে পারে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, ‘পুরো জেলাই বন্যাকবলিত। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’