বরিশাল-৪ আসন
পঙ্কজ নাথের বদলে শাম্মী আহম্মেদকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চাইলেন আওয়ামী লীগের নেতারা
আগামী সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বদলে শাম্মী আহম্মেদকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সোমবার বিকেলে হিজলা উপজেলায় এক কর্মী সভায় শাম্মী আহম্মেদের উপস্থিতিতে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ দাবি তোলেন।
সোমবার বেলা তিনটায় হিজলার কাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে এ কর্মী সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ।
বক্তারা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের সমালোচনা করে বলেন, পঙ্কজ নাথ ও তাঁর সমর্থকেরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ১০ বছর ধরে নির্যাতন, নিপীড়ন করেছেন। তাই দলের লোকজন এবার শাম্মী আহম্মেদকে প্রার্থী হিসেবে চান।
সভায় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। শাম্মী আহম্মেদ মনোনয়ন পেলে তাঁকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের অত্যাচার থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মুক্তি পাবেন।’
হিজলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ তানভীর বলেন, এত দিন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ ও তাঁর লোকজন যে দমন-পীড়ন করেছেন, শাম্মী আহম্মেদকে বিজয়ী করে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
শাম্মী আহম্মেদ তাঁর বক্তব্যে কারও সমালোচনা করেননি এবং নিজে এই আসনে প্রার্থী হবেন, এমন ঘোষণাও দেননি। তিনি তাঁর বক্তব্যে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান এবং গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
শাম্মী বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিতে হবে। নৌকার বিজয় হলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসবে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের ভাগ্যোন্নয়নে যে কাজ করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে।
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ কর্মী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বরিশাল জেলা পরিষদের সদস্য পণ্ডিত শাহাবুদ্দিন, আবদুল লতিফ খান, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাব আহমেদ, কাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লু আহমেদ, হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ, যুবলীগ নেতা মিজান সরদার প্রমুখ।
দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে পঙ্কজ নাথের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে পঙ্কজ নাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। তিনি তাঁর জবাব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তাঁর ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে একটি আবেদনও করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের অক্টোবরে পঙ্কজ নাথ ও আবেদনকারী শতাধিক নেতা-কর্মীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আর দলীয় কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই।
এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল খান বলেন, গত বছরের নভেম্বরে পঙ্কজ নাথের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেখানে তাঁকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যকে সম্মেলনে না আসার জন্য বলা হয়েছিল। ওই সম্মেলনে পঙ্কজ নাথের সমর্থক নেতাদেরও কোনো পদ-পদবিতে রাখা হয়নি। তবে পঙ্কজ নাথ তাঁর নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।
পঙ্কজ নাথ সোমবার সকালেও বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীর তীর স্থায়ী সংরক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সদর উপজেলার চরকাউয়া প্রান্তে এই অনুষ্ঠান হয়। যোগাযোগ করা হলে সোমবার সন্ধ্যায় পঙ্কজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে দলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করা যাবে না। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন। মূলত তাঁর প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের ভাষায় কথা বলছে।
পঙ্কজ দেবনাথ আরও বলেন, ‘আমি এখনো এলাকায় একটি সভায় আছি। গত তিন দিনে ১৩টি সভা করেছি। আর মনোনয়ন দেওয়া-না দেওয়ার ব্যাপারটি আমাদের নেত্রীর ব্যাপার। তিনি যা করবেন, সেটাই চূড়ান্ত। নেত্রীর একজন কর্মী হিসেবে আমি তাঁর ওপর পূর্ণাঙ্গভাবে আস্থাশীল।’