মৌলভীবাজারে গাছে গাছে উছলে পড়া জারুলের শোভা
গ্রীষ্মের খর রোদে মৌলভীবাজারের হাওর-বাঁওড়, নদ-নদীর পাড়, সড়ক ও শহরের আনাচকানাচ বেড়ে ওঠা গাছে গাছে ফুটেছে জারুল ফুল। জারুলের উছলে পড়া রূপ নজর কাড়ছে সবার।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আছে, ‘এই পৃথিবীর এক স্থান আছে, সবচেয়ে সুন্দর করুণ/সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।’
মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট থেকে জারুল ফুলের সারি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে জারুলগাছ ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজের মাঝে বেগুনি রঙের ওড়নার মতো দুলছে গাছের ডালগুলো। সড়কের মহলাল বাজারেও বড় একটি গাছে প্রচুর জারুল ফুল ফুটেছে। সড়কের রাজনগর কলেজ মোড়ে দেখা হয় কানাডাপ্রবাসী ফুলপ্রেমী নুরুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে জারুল ফুল দেখে আমার মন ভরে গেছে।’
শুধু মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক নয়, মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়কের রাজনগর অংশেও সড়কের দুই পাশে কোথাও একা, কোথাও দুই-তিনটি করে জারুলের বেশ কিছু গাছ আছে। সেই সব গাছে এখন বেগুনি রূপের বন্যা। এসব গাছ কারও যত্ন–আত্তিতে বেড়ে ওঠেনি, এগুলো প্রকৃতিতে নিজের নিয়মেই বেড়ে উঠেছে। গ্রীষ্ম এলেই এসব গাছে অনেকটা সময় ধরে ফুল ফুটছে, ফুল ঝরছে। গাছের পাতা ঝরে গিয়ে আবার প্রাণ নিয়ে জেগে উঠছে।
নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে জারুল ফুল সম্পর্কে বলেছেন, জারুলের পাতা লম্বা, চওড়া ও গাঢ় সবুজ। জারুল ফুলের বেগুনি রং যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি তার নমনীয় কোমল পাপড়ি শোভন-সুন্দর। ফল ডিম্বাকৃতির। ফুল ফোটার পরই শাখায় ফল ধরতে থাকে। জারুলের ফুল বর্ষা-শরৎ পর্যন্ত থাকে। জারুলের আদি আবাস চীন, মালয় ও বাংলা-ভারতের জলাভূমি।
আগে মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওর, হাওরপারের বিভিন্ন স্থানে জারুলগাছের প্রাচুর্য ছিল। নির্বিচার কেটে ফেলায় এখন অনেকটা কমে গেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট থেকে যে সড়কটি হাওরগ্রাম অন্তেহরির দিকে গেছে, সেই পথের দুই পাশে ছোট-বড় অনেক জারুলগাছ চোখে পড়ে।
কাউয়াদীঘি হাওরপারের জগৎপর, জুমাপুর, কাদিপুরসহ অন্তেহরির বিভিন্ন বাড়িতে, পথের পাশে, পুকুরপাড়ে জারুল ফুল ফুটে আছে। সোমবার মৌলভীবাজার শহরের পৌরসভা কার্যালয়ের পূর্ব পাশে, পূর্ব গির্জাপাড়া, পৌরসভা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েকটি জারুলগাছে ফুল ফুটে থাকতে দেখা গেছে। শহরের মনু নদের পাড়ে শান্তিবাগ ওয়াকওয়ের মনু নদ ঘেঁষে লাগানো জারুলগাছের কয়েকটিতেও প্রথমবারের মতো থোকা থোকা জারুল ফুল ফুটেছে। এই গরমে জারুলের সৌন্দর্য বাসিন্দাদের মনে একটু হলেও শান্তির পরশ দিচ্ছে।