নেত্রকোনায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় যুবক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ২

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নুরুল আমিন ওরফে রুহুল (২৪) হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জ শহরের একটি এলাকা থেকে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। আজ রোববার বিকেলে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ নিয়ে মোট তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন ইসলাম উদ্দিন (৫৩) ও তাঁর স্ত্রী রুখসানা আক্তার (৪০)। তাঁরা আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বরপুর ইউনিয়নের দেওগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। আর নিহত নুরুল একই গ্রামের আমিন কাজিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অসীম কুমার উকিলকে হারিয়ে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার। ৭ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে নির্বাচনের ফলাফল জানাজানি হলে ট্রাক প্রতীকের সমর্থকেরা লুনেশ্বর ইউনিয়নের দেওগাঁও এলাকায় বিজয় মিছিল করেন। এ নিয়ে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে নুরুল আমিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এ ঘটনার তিন দিন পর নিহত ব্যক্তির বড় ভাই সোহাগ হাসান বাদী হয়ে বুধবার রাতে লুনেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেওগাঁও গোবিন্দপুর উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও সাতজনকে।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন নৌকা প্রতীকের সমর্থক ইসলাম উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন ওরফে আবদুল বারী, আনোয়ার হোসেন, রুবায়েত মিয়া, মো. আশিকুজ্জামান, জাকির হোসেন, মো. সোয়েব, মো. কিবরিয়া, নূরে আলম ও রুখসানা আক্তার। তাঁদের মধ্যে পুলিশ বুধবার রাতে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল রাতে ইসলাম উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রুখসানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে নুরুল আমিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই দিনই জয়ী প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার, নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সাহেব আলী পাঠানসহ পুলিশের ঊধবর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ নুরুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়াসহ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।

মামলার বাদী সোহাগ হাসান আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘নির্বাচনে হার–জিৎ থাকবেই। কিন্তু পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার এক সপ্তাহ চলে গেলেও ১১ জন আসামির মধ্যে এখনো আটজন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না। ভাইকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

নতুন সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার বলেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা (পুলিশ সুপার ও ওসি) আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করা যাচ্ছে, পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে।