একটি কোমল পানীয়র বোতল নেওয়ার অভিযোগে দুই কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন

নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি কোমল পানীয়র বোতল চুরির অভিযোগ এনে হাত-পা বেঁধে দুই কিশোরের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক কিশোর মানসিক প্রতিবন্ধী। উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার এলাকায় এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুলাউড়া থানায় মামলা হয়। এ মামলায় এক দোকানমালিকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিরবাজার এলাকায় ‘বেঙ্গল ফুড’ নামের একটি খাবারের দোকান রয়েছে। এটির মালিক স্থানীয় বাসিন্দা খালিদ হাসান। বুধবার বিকেলে একটি গাড়িতে করে খালিদের কিছু মালামাল আসে। এ সময় তিনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ১৭ ও ১৬ বছর বয়সী দরিদ্র পরিবারের স্থানীয় দুই কিশোরকে মালামাল নামানোর কাজে লাগান। এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সী কিশোর মানসিক প্রতিবন্ধী বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

নির্যাতনের শিকার দুই কিশোরের বরাত দিয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরের বড় ভাই জানান, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ শেষের দিকে তাঁর ভাই তৃষ্ণা মেটাতে গাড়ি থেকে কোমল পানীয়র একটি বোতল নিয়ে যায়। এ সময় খালিদ ও তাঁর দোকানের কর্মচারীরা চুরির অভিযোগ এনে তাকে ধরে একটি জিমনেশিয়ামের ভেতরে নিয়ে আটকে রাখেন। আরেক কিশোর পিছু পিছু গেলে তাকেও আটকে রাখা হয়। সেখানে দুই কিশোরের হাত-পা বেঁধে তাদের মারপিট করা হয়। এরপর তাদের স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

খবর পেয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরের বড় ভাই সেখানে ছুটে যান। একপর্যায়ে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের নির্দেশনায় সাদা কাগজে সই দিয়ে দুই কিশোরকে তাঁর জিম্মায় নিয়ে আসেন। ছাড়া পাওয়ার পর দুই কিশোরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা সিয়াম রাফি বলেন, দুই কিশোরের মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরের পিঠ ও বুকে বেশি আঘাতের চিহ্ন ছিল। দুই কিশোরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরের ভাই কুলাউড়া থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। বিকেলে এলাকায় অভিযান চালিয়ে দোকানমালিক খালিদ হাসানকে আটক করা হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই কিশোরের ভাই বাদী হয়ে খালিদ হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় খালিদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আটক হওয়ার আগে খালিদ হাসান বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।

এদিকে দুই কিশোরকে মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে পাপ্পু আহমদ নামের দোকানের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশীদ আজ শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দুই কিশোরের ওপর নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার খালিদ ও পাপ্পুকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।