সিরাজগঞ্জে ইফতারে ‘সলপের ঘোল’ ছাড়া চলেই না
সিরাজগঞ্জে প্রতিবারের মতো এবারও রোজার শুরু থেকেই ইফতার আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী ‘সলপের ঘোল’ কদর পাচ্ছে। রোজার প্রথম দিন থেকেই গ্রাম কিংবা শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত ও প্রসিদ্ধ দই মিষ্টির দোকানগুলোতে প্লাস্টিকের বোতল ও অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে ঘোল সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় তৈরি সুস্বাদু পানীয় খ্যাতি পেয়েছে ‘সলপের ঘোল’ নামে। শুধু চলনবিল ও যমুনা নদীবেষ্টিত এই জনপদে নয়, দূরদূরান্তে ছড়িয়ে আছে সলপের ঘোলের সুনাম।
স্থানীয় লোকজন বলেন, এই ঘোল তৈরির পেছনে আছে ১০০ বছরের ঐতিহ্য। উল্লাপাড়ার সলপ এলাকায় তৈরি এই ঘোল সংগ্রহ করেই বিক্রি হচ্ছে জেলাজুড়ে।
উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের পাশে ঘোলের দোকানগুলো জমে উঠেছে। দোকানের সামনে অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র সাজিয়ে চলছে বিক্রি। দোকানের পেছনে কর্মীরা ঘোল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এই ঘোলের জন্য এখানে এসেছেন।
এই ঘোল বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক কারিগর বলেন, প্রতিদিন ভোরে গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দেওয়ার পর পাত্রে করে সারা রাত রেখে দেওয়া হয় সেই দুধ। সকালে জমে থাকা সেই দুধের সঙ্গে চিনি ও অন্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু পানীয়।
ঘোল বিক্রেতারা বলেন, প্রতিদিন সলপ রেলস্টেশন এলাকায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ ঘোল ও মাঠা বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি লিটার ঘোল ৬০ টাকা ও মাঠা ৮০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। তবে জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতি লিটার ঘোল ১০০ টাকা, মাঠা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘোল তৈরির উপকরণ দুধ ও চিনির দাম বাড়ার কারণে এই ঘোলের দাম গতবারের চেয়ে এবার বেড়েছে।
ঘোল কিনতে আসা রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ লিটার ঘোল ও মাঠা এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাই। এই রজমানে ঘোল ও মাঠার বেশ চাহিদা। গরমে রোজা রেখে এক গ্লাস সলপের ঘোল পান রোজাদারকে তৃপ্তি দেয়। সলপের ঘোল ছাড়া যেন আমাদের চলেই না।’
জেলার শাহজাদপুর থেকে সলপের ঘোল কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আল আমিন। তিনি বলেন, ‘সলপ থেকে সরাসরি এই ঘোল কিনলে কম দামে পাওয়া যায়। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে সলপের ঘোল কিনতে আমি এখানেই চলে এসেছি।’
সলপের ঘোল বিষয়ে পুষ্টিবিদ কানিজ ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ঘোল বা মাঠা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি পানীয়। এ দইয়ে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে; যা শরীরের জন্য ভালো। এটি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, হজমে সহায়তা করে। ক্লান্তি, বিষণ্নতা কমিয়ে মনে প্রশান্তি আনে, মেজাজ ফুরফুরে রাখে। এ কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষ এই পানীয় পান করে আসছেন।