বেলকুচিতে পৌর মেয়রের ওপর হামলার ঘটনায় ২০ জনের নামে মামলা

বেলকুচি পৌরসভার মেয়রের ওপর হামলার ঘটনার পরের চিত্র। বৃহস্পতিবার বেলকুচি পৌর চালা এলাকার আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠেছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার মেয়রের ওপর হামলার ঘটনায় ২০ জনের নামে মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মণ্ডলের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সেলিম সরকার, বেলকুচি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুলফিকার আলী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলীসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০-৩০ জনকে।

হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুই কিশোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বেলকুচি পৌর এলাকার গাড়মাসি মহল্লার সাকিল প্রামাণিক (২৪), জুবায়ের হোসেন (১৮) এবং শেরনগর মহল্লার জাফর শেখ (২৫)।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর দুই কিশোরকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গতকাল বেলা ২টার দিকে বেলকুচি পৌর চালা এলাকায় আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মেয়র ও তাঁর দুই বছরের সন্তান অস্তিত্ব হকসহ চারজন আহত হন।

হামলায় আহত অপর দুজন হলেন বেলকুচির পৌর চালা এলাকার নাবিল মণ্ডল (৩৫) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৪০)। তাঁদের বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনার ছবি তুলতে গেলে মানবজমিন পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি আবু মুসাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ সময় তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা।

আহত ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল স্থানীয় আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের নিরীক্ষক দল আসে। বেলকুচির মেয়র সাজ্জাদুল হক ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাই নিরীক্ষার সময় তিনি সেখানে যান। এ সময় তাঁর কোলে তাঁর দুই বছরের সন্তান অস্তিত্ব হকও ছিল। বেলা দুইটার দিকে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এ সময় সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মণ্ডলের পিএস সেলিম সরকারের নেতৃত্বে একদল লোক বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যেই মেয়রের পথ রোধ করেন ও তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় মেয়র দ্রুত তাঁর সন্তানকে কোলে নিয়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে যান। পাশ থেকে মেয়রের দুই অনুসারী ঠেকাতে এলে তাঁদের লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে মাত্র ৩০০ মিটার দূরের বেলকুচি থানা থেকে পুলিশ এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যান।

মেয়র সাজ্জাদুল হক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মণ্ডলের অনুসারী বেলকুচি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুলফিকার আলী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী ও পিএস সেলিম সরকার তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গতকাল বেলা দুইটার দিকে তিনি বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আসার সময় পিএস সেলিম সরকার পিস্তল বের করে তাঁর পথ রোধ করেন। এরপর হাফিজুল ইসলাম, জুলফিকার আলী, ইউসুফ আলী তাঁকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন।

অভিযোগের বিষয়ে সেলিম সরকার বলেন, সাত মাস আগে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন হয়ে মেয়র পুনরায় সভাপতি হয়েছেন, বিষয়টি বেশির ভাগ অভিভাবক জানেন না। এ নিয়ে কিছু অভিভাবক শিক্ষা বোর্ডের নিরীক্ষক দলকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁরা এ অভিযোগের বিষয়টি লিখিতভাবে জমা দিতে বলেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মেয়রের লোকজনের একটু কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়েছে। খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। আর কিছুই হয়নি।

আরও পড়ুন