হাসপাতালের বাইরে গাছের নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত চার বছরের সাইদুল ইসলামকে। পাশে তার চার মাসের ভাই মো. আবদুল্লাহ। গাছের সঙ্গে বাঁধা রশিতে ঝোলানো হয়েছে স্যালাইন। পাশে বসে আছেন তাদের বাবা তাইজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। কিন্তু শয্যা পাইনি। তাই গাছতলায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে’।
এ রকম এক–দুজন নয়, অন্তত ৪০ থেকে ৫০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের খোলা চত্বরে। বন্যার পর থেকে ডায়রিয়া রোগীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ওয়ার্ড, বারান্দা ছাপিয়ে অনেকের ঠাঁই নিতে হয়েছে হাসপাতাল সামনের ওই চত্বরে।
আজ সোমবার সকালে এই হাসপাতালে মোট ডায়রিয়া রোগী ছিলেন ১৭৩ জন। এর মধ্যে ১৪০ জন নারী ও শিশু। ডায়রিয়াসহ মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬৮।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৮টা পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী ১৭৩ জন ছিল। কিন্তু ১২টায় রোগীর সংখ্যা দুই শতাধিক হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য চাহিদা দিয়েছি। ওষুধ চলে আসবে।’
আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালের সামনের চত্বরে গাছতলায় পাটি বা চাটাই বিছিয়ে থাকছেন। গাছের সঙ্গে স্যালাইন টানিয়ে তা রোগীর শরীরে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে কথা হয় ফেনী সদরের আলকরা এলাকার লায়লা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজ সকালে আট মাসের শিশু মো. আজহারুলকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। লায়লা প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে ছেলেটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আজ এখানে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু শয্যা পাইনি। তাই গাছতলায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনীর ছয় উপজেলা থেকে ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে আসছে। মূলত ২৫ আগস্ট থেকে ডায়রিয়া রোগী আসা শুরু হয়েছে। তবে গত দুই দিনে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
ফেনীর পাঠানবাড়ি থেকে শিশু সাইফুল ইসলামকে নিয়ে চার দিন আগে হাসপাতালে আসেন মা শাহানা বেগম। শয্যা না পাওয়ায় তাকেও খোলা চত্বরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দিনের বেলায় গাছের নিচে থাকলেও রাতে বারান্দায় চলে বলে জানালেন রোগীর স্বজন ও নার্সরা। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স সবিতা রানী জানান, তাঁদের ওয়ার্ড ১৮ শয্যার। কিন্তু রোগী ১৪০ জন। বাধ্য হয়ে বাইরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আর লোকবল সংকটের কারণে সেবাও বিঘ্ন ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এত রোগী সামাল দেওয়ার চিকিৎসক-নার্সের অভাব ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট আছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস ধরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কেউ নেই। এ ছাড়া মেডিকেল অফিসারও পর্যাপ্ত নয়। নার্সের সংকট আছে। ওষুধের সংকটও রয়েছে। কারণ হাসপাতালটি বন্যায় ডুবে গিয়ে কিছু ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে রোগীদের কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।