চচট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আইনজীবী হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান সাবেক মহানগর কৌঁসুলি ও আইনজীবী আবদুস সাত্তার গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের কাছে এই সুপারিশ করে কমিটি থেকে অব্যাহতি চান। এর আগে কমিটির সদস্যসচিবসহ চার সদস্য অব্যাহতি চেয়েছেন।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আইনজীবী হত্যার ঘটনার পর সমিতি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যসচিব কাশেম কামালসহ সব সদস্য ইতিমধ্যে অব্যাহতি চেয়েছেন। কারণ জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক দিয়ে আলোচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আইনজীবীদের পক্ষে এই ঘটনার তদন্ত করা যাবে না। ঘটনার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসন ও আদালতের কর্মকর্তারাও সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আবদুস সাত্তার আরও বলেন, ‘কেন চিন্ময় দাসের মামলার শুনানি দ্রুত শেষ করা হয়নি, ভার্চ্যুয়ালি হয়নি কেন, আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, প্রিজন ভ্যানে চিন্ময়ের কাছে হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল, পুলিশ হেফাজতে কীভাবে তিনি বক্তব্য দেন, প্রিজন ভ্যানের মুখটি উল্টো দিকে কেন ছিল, উসকানিমূলক স্লোগান কারা দিয়েছিল, ঘটনার শুরুতে কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নিসহ নানা বিষয় যথাযথ তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত করতে হবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়া আবদুস সাত্তার বলেন, ইতিমধ্যে ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এসব বিষয় তদন্ত করছে। আইনজীবীদের তদন্তের চেয়ে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার কাউকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবী সমিতির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধানসহ পাঁচ সদস্য তদন্তপ্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। নানা সুপারিশও করেছেন। কী করা যায় রোববার সমিতির সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন মারধর করেন।