সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। কয়েকজন তরুণের জটলার মধ্যে কথা হচ্ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবদুল আজিজ সায়েমকে (২১) নিয়ে। স্মৃতিচারণায় মুমরাজ আলম নামের তাঁর এক বন্ধু বলছিলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত আবদুল আজিজের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন তিনি। ঠিক পরদিন সকালেই এমন একটি দুর্ঘটনার খবর পাবেন, কল্পনাও করতে পারেননি।
একপর্যায়ে হতবিহ্বল এসব তরুণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন আবদুল আজিজের বাবা আবদুর রহমান। জানতে চাইলেন, তাঁরা চলে যাবেন কি না? জবাবে তরুণেরা একযোগে বলে উঠলেন, বন্ধুকে শেষবার দেখে এরপরই ফিরবেন, সম্ভব হলে একসঙ্গে ফিরবেন। আর কোনো কথা বলতে পারলেন না আবদুর রহমান। ছলছল চোখে তাঁদের দিকে একবার তাকালেন। এরপর কিছুটা দূরে গিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকলেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে হাসপাতালটিতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে আবদুল আজিজসহ সৈয়দ মোখলেছ ওরফে মহান (২০) ও হাফিজুর রহমান (১৯) নামের তিন শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আবদুল আজিজ ও সৈয়দ মোখলেছ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দা ও পরস্পর বাল্যবন্ধু। ওই তরুণদের সবাই আবদুল আজিজের বন্ধু।
আবদুল আজিজের বন্ধু মুমরাজ আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত তাঁরা ছাতকের কোর্ট এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলেছিলেন। এরপর যে যাঁর মতো বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হন। পথে আবদুল আজিজ তাঁদের জানিয়েছিলেন, পরদিন শুক্রবার ভোরে সিলেট থেকে আরও দুজন আসবেন। তাঁদের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে সিলেটের লামাকাজিতে খেজুরের রস খেতে যাবেন। কিন্তু পরে আবদুল আজিজের বাবা আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘আজিজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু বিষয়টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক কোণে তখনো নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল আজিজের বাবা আবদুর রহমান। নীরবতা ভেঙে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবদুল আজিজ সায়েম ও সায়মা বেগম নামে তাঁদের যমজ সন্তান হয়েছিল। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে আবদুল আজিজ ছিলেন তৃতীয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে আবদুল আজিজ ঘরে ফিরেছিলেন কি না, তিনি বলতে পারেন না। খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গতকাল সকালে ছাতকে দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন এমন খবর শুনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নিহত ব্যক্তিদের একজন তাঁর ছেলে।
এদিকে আবদুল আজিজের আরেক বন্ধু ইউসুফ আহমদ দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুনেছি গতকাল ভোরে সিলেট থেকে দুজন প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছিল। পরে ছাতক থেকে পাঁচজন মিলে খেজুরের রস খেতে বের হয়েছিল। গতকাল সকালে খেজুরের রস খেয়ে তাঁরা জৈন্তাপুরের হরিপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখান থেকে আবার জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিল দেখতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’