টাকা না পেয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে হত্যার’ অভিযোগে ছয় বছর পর ১৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

বন্দুকযুদ্ধপ্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছেলেকে হত্যার অভিযোগে ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি। ঘটনার ছয় বছর পর আজ রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ সদর ১ নম্বর আমলি আদালতে এই মামলার আবেদন করেন হারুন অর রশিদ (৫৪)। পরে আদালত মামলাটির আবেদনটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

হারুন অর রশিদ ময়মনসিংহ নগরের পুরোহিতপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর ছেলের নাম মো. রাজন (২৩)। হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মাত্র ১০ লাখ টাকা দিতে না পারায় ওসি আশিকুর রহমানসহ (জেলা পুলিশের গোয়েন্দ শাখা (ডিবি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) অন্য পুলিশ সদস্যরা আমার ছেলে রাজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আদালতে মামলা করেছি।’

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২২ মে মঙ্গলবার রাত একটার দিকে জেলা ডিবির তৎকালীন ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পুরোহিতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে রাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাদী ছেলে দেখার জন্য ডিবি কার্যালয়ে যান। কিন্তু দুদিনেও তাকে সেখান থেকে ছাড়া হয়নি। দুদিন পর ২৪ মে সকালে বাদী আবারও ছেলেকে ছাড়াতে ডিবি কার্যালয়ে যান। তখন ওসি আশিকুর রহমান তাঁর ছেলেকে ছাড়াতে ১০ লাখ টাকা রাতের মধ্যে দিতে চাপ দেন। বাদী টাকা সংগ্রহ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে পুরোহিতপাড়া রেলওয়ে ভাঙ্গাওয়াল সংলগ্ন পুকুরপাড় এলাকায় রাজনকে নিয়ে গিয়ে ওসি আশিকুর রহমানের নির্দেশে সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে বুকে ও পেটের নিচে কয়েকটি গুলি করেন। এরপর রাজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে মরদেহ তুলে দেয়।

মামলায় আশিকুর রহমান ছাড়াও আরও অন্য আসামিরা হলেন পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, পরিমল চন্দ্র দাস ও আক্রাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, জিন্নাত হাসান মানিক, জাকির হোসেন ও জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, গোলজার, ছোহরাব আলী, সাইফুল, সেলিম, রাশেদুল, সানোয়ার ও জহিরুল ইসলাম।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মো. রাজন (২৩) স্থানীয় ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। এসএসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর আর পড়ালেখা করেননি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। তবে রাজনের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমার ছেলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ছেলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, এমন প্রমাণ পেলে আমিসহ বিচার হোক।’

ময়মনসিংহ আদালত পুলিশের পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান জানান, বাদী হারুন অর রশিদ মামলা দায়েরের জন্য রোববার আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত ঘটনা তদন্ত করে ওসি কোতোয়ালি মডেল থানাকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।