চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর মোটরসাইকেল মহড়া থেকে হামলা-ভাঙচুর
চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর-সদর একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদিকুর রহমানের মোটরসাইকেল মহড়া থেকে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলার উথলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার সময় কয়েকটি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
আকস্মিক ওই হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উথলী গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে রিজু মিয়া (৪৫), ওয়াজ বক্সের ছেলে সাহাবুল হোসেন (৩৫) ও এবাদত আলীর ছেলে আসানুর রহমান (৩০)। বাকি চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদিকুর রহমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং দর্শনার শেখ রাসেল স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর বাড়ি জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের শিংনগর গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেলে আসরের নামাজের পর অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে জীবননগর শহরে যান আওয়ামী লীগ নেতা সাদিকুর রহমান। ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি ট্রাকের সঙ্গে মহড়ায় অংশ নেওয়া একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেলের কয়েকজন ট্রাকটি ভাঙচুর ও চালক শাহজাহান আলীকে মারধর করেন। এ সময় উথলী বাসস্ট্যান্ড এলাকার সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ করেন। পরে মহড়ায় অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং আশপাশের দোকানপাটে ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে জীবননগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ট্রাকচালক শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, সবজির ট্রাক নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য উথলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ট্রাকের কাচ ভেঙে দেয়।
স্থানীয় বিকাশ এজেন্ট তুষার আলী অভিযোগ করেন, কোনো কারণ ছাড়াই সাদিকুরের অনুসারীরা তাঁর দোকানে হামলা-ভাঙচুর করে নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যান। ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন, মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক আসানুর রহমান ও চা বিক্রেতা জিয়াউর রহমান একই ধরনের অভিযোগ করেন।
উথলী বাসস্ট্যান্ড বাজার কমিটির সভাপতি আসাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সাদিকুরের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন নিরীহ লোকজন ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলাসহ লুটপাট করা হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা সাদিকুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নানের অনুসারীরা বিনা উসকানিতে তাঁর শোডাউনে অংশ নেওয়া লোকজনকে মারধর করেছেন।
সাদিকুরের বক্তব্যকে অসত্য দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি নিজে সাবদালপুরে ছিলাম। সন্ধ্যার ঘটনাটিও অরাজনৈতিক। সাদিকুরের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন যাঁদের ওপর হামলা করেছেন, তাঁরা নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ এবং সাধারণ ব্যবসায়ী।’
পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যমতে, উথলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি সবজির ট্রাকের সঙ্গে সাদিকুরের শোডাউনে অংশ নেওয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। মোটরসাইকেল আরোহীরা ট্রাকচালক ও তাঁর ভাইকে মারধর করলে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করেন। এরপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অভিযোগ করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।