দেবীগঞ্জে জমে উঠেছে জলপাইয়ের হাট, দিনে বিক্রি প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার
সকাল হলেই ভ্যান, রিকশা আর পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আনা হচ্ছে বস্তাবোঝাই জলপাই। মাটিতে বিছানো পলিথিনে ঢেলে করা হচ্ছে স্তূপ। সেখান থেকেই ব্যবসায়ীরা এসব জলপাই কিনে ওজন করে তুলছেন গন্তব্যে নেওয়ার গাড়িতে।
এমন চিত্র এখন প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের দেবদারুতলায়। মৌসুমজুড়ে জমজমাট বাজারটিতে প্রতিদিন জলপাই বিক্রি করতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরের মতো এবারও জমে উঠেছে এই জলপাইয়ের হাট। এখানে দিনে অন্তত ৩০ মেট্রিক টন জলপাই বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে, যার মূল্য প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা।
সম্প্রতি দেবীগঞ্জের এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জলপাই বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব জলপাই কিনছেন। জলপাই ওজন দিয়ে বস্তায় আর ক্যারেটে (ঝুড়ি) ভরছেন তাঁরা। মানভেদে প্রতি কেজি জলপাই বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি জলপাই কেনার জন্য ইজারাদারকে টোল দিতে হয় ৫০ পয়সা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাস জলপাইয়ের ভরা মৌসুম। মৌসুম শুরুর আগেই বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে গাছে থাকা অপরিপক্ব জলপাই চুক্তিতে কিনে নেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পাকলে সেসব গাছ থেকে জলপাই পেড়ে নিয়ে আসেন দেবদারুতলার বাজারে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব জলপাই কেনেন। এতে বেশ লাভ হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। অন্য দিকে বাজারে আনার ঝক্কি এড়াতে বাড়িতে বসেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে জলপাই বিক্রি করেন গাছ ও বাগানমালিকেরা।
জলপাইয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকের জলপাই কিনে বাজারে আনি। এখানে জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব জলপাই কিনে নিয়ে যান। এতে কৃষকের ভোগান্তি হয় না আবার আমাদেরও আয় হয়। বর্তমানে জলপাইয়ের বাজার ভালো। এ জন্য আমাদের লাভ হচ্ছে।’
রাজশাহী থেকে জলপাই কিনতে আসা ব্যবসায়ী আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘দেবীগঞ্জে জলপাইয়ের মান ভালো হওয়ায় আমরা প্রতিবছর এখানে জলপাই কিনতে আসি। এবারের মৌসুমে মানভেদে ২৫ টাকা কেজি থেকে ৪৫ টাকা কেজি পর্যন্ত জলপাই কিনেছি। এখান থেকে জলপাই কিনে আমরা বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি করা কারখানায় সরবরাহ করি। কখনো ট্রাকে আবার কখনো ট্রেনেও এসব জলপাই নিয়ে যাই।’
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় জলপাইয়ের নির্দিষ্ট কোনো বড় বাগান নেই। তবে স্বল্প পরিসরে ছোট ছোট বাগান, বাড়ির উঠানে, সুপারিবাগানে, সড়কের ধারে আর জমির আলে জলপাইগাছ রোপণ করেন কৃষকেরা। গাছে সামান্য পরিচর্যায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে জলপাই ধরে। বাড়তি আয় হওয়ায় দিন দিন জলপাইগাছ রোপণে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বর্তমানে জেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে জলপাইবাগান আছে। গত মৌসুমে পঞ্চগড় থেকে ১৫৫ মেট্রিক টন জলপাই বিক্রি হয়েছিল। এবারের মৌসুমে আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা।