নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ডাইং ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমকে (৬২) হত্যা করে লাশ সাত টুকরা করেন এক নারী (৩০)। এই নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় গত রোববার রাতে রাগ ও ক্ষোভে প্রথমে জসিমকে দুধের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করেন ওই নারী। পরে তাঁকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা এবং হত্যার পর হাড়গুলো হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে কেটে টুকরা করেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন আটক ওই নারী।
ওই নারীর দেখানো স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি হ্যাকসো ব্লেড ও পরনের সাফারি, জুতা জব্দ করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
নিহত জসিম নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কাঠেরপুল এলাকার মৃত আলেক চান ব্যাপারীর ছেলে। তিনি ফতুল্লার কাঠেরপুল চাঁদ ডাইং ও নিট কম্পোজিট গার্মেন্টসের মালিক। তিনি পরিবার নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।
আটক নারী ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার বাসিন্দা। জসিম রাজধানীর মিরপুর কাফরুল থানার শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ওই নারীকে রেখেছিলেন।
এর আগে ১৩ নভেম্বর সকালে রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন লেকপাড় এলাকায় হাত ধুতে গেলে পলিথিনে মোড়ানো মরদেহ দেখতে পান এক রিকশাচালক। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে একটি কালো পলিথিনে বস্তাবন্দী অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তির টুকরা (অজ্ঞাত ব্যক্তির মাথা, দুটি হাত, বিচ্ছিন্ন দুটি পা, বিচ্ছিন্ন বুকের পেছনের অংশ, পেটের ভুঁড়ি, ফ্যাপসা, কলিজা এবং দেহের অংশ একটি সাদা পলিথিনের ভেতর মোড়ানো অবস্থায়) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তির টুকরা মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করে। তিনি বলেন, জসিমের গাড়িচালক মো. মালেকের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ) সার্কেল মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে রূপগঞ্জ থানা–পুলিশের একটি দল সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীকে শনাক্ত করে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুর কাফরুল থানার শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হ্যাকসো ব্লেড, সাফারি স্যুট, জুতা জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানিয়েছেন, জসিম বিবাহিত হওয়ার পরও তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও অপর এক নারীর সঙ্গে নতুন করে পরকীয়ায় জড়ান। এ কারণে তিনি রাগে, ক্ষোভে দুধের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে জসিমকে কেটে টুকরা করে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহের টুকরাগুলো উবার গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রূপগঞ্জের পূর্বাচল লেকের পাড়ে ফেলে দিয়ে আসেন।
এসপি জানান, এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জসিমের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির ছেলে ওবায়দুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ছুটে যান। সেখানে জসিমের ছেলে ওবায়দুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত রোববার বিকেলে তাঁর বাবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গুলশানের বাসা থেকে বের হন। পরে গুলশানে নিজের গাড়িটি ছেড়ে দেন এবং অন্য একটি গাড়ি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যাবেন বলে চালককে জানান। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর বাবা জসিম মুঠোফোনে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রাতে তিনি বাসায় ফেরেননি। পরদিন সকালে তাঁর বাবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাঁরা গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত বুধবার রাতে খবর পেয়ে মর্গে এসে দাড়ি, নখ ও কিছু চিহ্ন দেখে তাঁর বাবার মরদেহ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু ধারণা করছি না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের প্রত্যেকের আমরা ফাঁসি চাই।’